সুস্থ হার্ট, সুন্দর জীবন। আর সুন্দর জীবনের প্রত্যাশা সবার। বাংলাদেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষের বিভিন্ন ধরনের হূদরোগ রয়েছে। আর বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রয়েছে অকালে হৃদরোগ হওয়ার প্রবণতা। তাই হার্টের সমস্যাকে ছোট করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। যদিও বাংলাদেশে হূদরোগের চিকিৎসার খরচ পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের তুলনায় সহনীয় পর্যায়ে আছে, তবু এ চিকিৎসাসেবা এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে।
আর যেহেতু সরকারি চিকিৎসাসেবার অবকাঠামোর মাধ্যমে সব লোকের চিকিৎসা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়, তাই অন্যান্য রোগের মতো হূদরোগ প্রতিরোধের দিকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন ব্যাপক গণসচেতনতা।
বেতার ও টেলিভিশনে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় নিয়মিত। কিন্তু এ অনুষ্ঠানগুলো হয় এমন সময়, যখন সবাই কর্মব্যস্ত থাকে। ফলে এ অনুষ্ঠানগুলোর দর্শক-শ্রোতাও বেশি থাকে না।
রোগ নির্ণয় বা রোগের ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠান নয়, কারণ রোগী না দেখে শুধু সামান্য বর্ণনা শুনে চিকিৎসার পরামর্শ দিলে ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর দর্শক-শ্রোতারাও অন্যের উপসর্গের সঙ্গে নিজের উপসর্গ মিলিয়ে নিজেই নিজের চিকিৎসক (!) বনে যেতে পারেন। আর এ দেশে ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই খুব সহজে ওষুধ কেনা ও সেবন করা সম্ভব।
১৫ কোটি জনসংখ্যার এ দেশে সমস্যার কোনো শেষ নেই। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’-এমন লোকের কাছে চিকিৎসাসেবা অনেক দূরের বিষয়। নিম্নধ্যবিত্ত বা নিম্ন আয়ের মানুষেরা সব সময় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারে না বা হলেও অনেক সময় ওষুধ কিংবা অন্য ধরনের চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থন তাদের থাকে না। পানি ফুটিয়ে পান করা বা ভালো করে হাত ধোয়ার গুরুত্ব যেমন প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছানো গেছে, তেমনি হূদরোগ প্রতিরোধের জন্য কী করা দরকার তাও তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সামান্য অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে যে বাতজ্বর ও বাতজ্বর-সংক্রান্ত অন্য অসুখ থেকে বাঁচা সম্ভব, তা জনসাধারণকে জানাতে হবে।
সুস্থ হার্ট নিয়ে বাঁচতে চাইলে তেল, চর্বি, লবণ-এগুলো কম খেতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ধূমপান, গুল, জর্দা, সাদাপাতা সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে।
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বা মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে হলে এগুলো জানা জরুরি।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় হূদরোগের প্রকোপ অন্যান্য দেশের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। হার্ট অ্যাটাকে যাঁরা আক্রান্ত হন, তাঁদের মধ্যে ২৫ শতাংশেরই বয়স চল্লিশের নিচে। আর ৫০ শতাংশের বয়স পঞ্চাশের নিচে।
এটা আমাদের জন্য একটা বিপদসংকেত। ঢাকাসহ বড় বড় শহরে শুধু হাতে গোনা কয়েকটি হাসপাতালে হৃদরোগের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।
অনেক জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় সুচিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার কোথাও রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব।
তাই অকালমৃত্যু রোধে আমাদের একজোট হয়ে হূদরোগ প্রতিরোধ করতে হবে। এ জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে, আর এ দায়িত্ব সমাজের সব সচেতন মানুষের।
উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো, ২১ নভেম্বর ২০০৭
লেখকঃ ডা· এম এইচ মিল্লাত
কনসালট্যান্ট কার্ডিয়াক সার্জন
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা
Leave a Reply