প্রাচীনকাল থেকেই রূপচর্চায় গোসলের বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলেই বিভিন্ন দেশের রাজা-রানীর গোসলের নানা কাহিনী পাওয়া যায়। তারা খুব আয়েশ করে রূপচর্চার কাজটা সারতেন। বিশেষভাবে তৈরি হতো তাদের গোসলখানা। এমনকি হালের আধুনিক রূপচর্চায়ও গোসলের বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। কেউ কেউ পুদিনার পানি দিয়ে গোসল সারতে ভালোবাসেন, কেউবা দুধ দিয়ে। আবার অনেকের কাছেই গোলাপের পাপড়ি বা গোলাপজলটা বেশি পছন্দনীয়। একেক জনের চাহিদা একেক রকম। তবে ত্বকের কথা চিন্তা করে গোসলে বৈচিত্র্য আনা জরুরি।
গোলাপের পাপড়ি
গোলাপজলে গোসলের রেওয়াজ বহু প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। হামাম খানায় নবাব গোলাপজলে শুয়ে আছেন আর পাপড়িগুলো ভেসে ভেসে আদর করে যাচ্ছে, এ ধরনের নবাবি জীবন-দৃশ্যের সঙ্গে আমরা বেশ পরিচিত। এ ধরনের গোসলের জন্য বাথ টাবের পানিতে সারা রাত গোলাপের পাপড়িগুলো ভিজিয়ে রাখুন। তবে পাপড়িগুলো সমান ভাবে ছড়াবেন। এক জায়গায় বেশি, অন্য জায়গাটা ফাঁকা, এমন যেন না থাকে। সকালে কয়েক ফঁোটা রোজ এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে দিন। ৪৫ মিনিট বিভিন্ন চিন্তাভাবনা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। চোখ বন্ধ করে আনন্দটা উপভোগ করুন। দেখবেন প্রশান্তির পারদ উপরে উঠবে। গোলাপের পানিতে গোসল করলে শরীরের সব মৃতকোষ দূর হয়ে যায় এবং ত্বকের রুক্ষ ভাবটিও কেটে যায়। ফলে গোলাপের মতোই হয়ে উঠবেন সতেজ।
পুদিনার পানি
শরীর ঠাণ্ডা রাখার একটি বিশেষ গুণ পুদিনার মধ্যে আছে। গোসলের কিছুক্ষণ আগে পানির মধ্যে কিছু পুদিনা পাতা ফেলে রাখুন। সেই পানিতে গোসল করলে শরীর ও মন চাঙ্গা থাকে। এ ছাড়া কয়েক ফোটা পুদিনার তেল পানির মধ্যে দিয়ে রাখতে পারেন। পুদিনা ত্বকের যে কোনো সংক্রমণকে ঠেকাতে অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে। যাদের একটু সময় আছে, তারা শুকনো পুদিনা পাতা ফুটিয়ে পুদিনার পানি তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দিন। এক বালতি পানিতে দশ থেকে পনেরো চামচ পুদিনার পানি মিশিয়ে গোসল করুন। এ গোসলের ফলে গরমকালে বিশ্রী দুর্গন্ধের থেকে রেহাই পাবেন। ঘামাচি, অ্যালার্জিও হবে না। পুদিনার অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট গুণ অতুলনীয়। কারণ পুদিনাবাটা রক্তক্ষরণ বন্ধ করে।
গোসল যখন মধুময়
মধুর সহজাত ময়েশ্চারাইজিং ক্ষমতা অপরিসীম। ময়েশ্চারাইজারের পরিবর্তে বাথটাবের পানিতে কয়েক ফোঁটা মধু রাখতে পারেন। এমনকি গোসলের আগে শরীরে মাখতে পারেন। এতে ত্বক উজ্জ্বল থাকবে সারা দিন এবং খসখসে বা টানটান ভাবও চলে যাবে। এ ছাড়া একটি পাত্রে কিছু ঠাণ্ডা পানি, পরিমাণ মতো মধু এবং গোলাপের নির্যাস (রোজ এসেন্স) একসঙ্গে মিশিয়ে তিন ঘণ্টা রেখে দিন। গোসল করার পর মধুমিশ্রিত এ পানি দিয়ে সারা শরীর হালকা মাসাজ করুন। এরপর ঠাণ্ডা পানিতে পুনরায় গোসল করুন। এভাবে শরীরের সব ময়লা ও দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে। মৃতকোষগুলো ধুয়ে যাওয়ার ফলে সব শরীরের ত্বক উজ্জ্বল হবে। ক্রমশ ফিরে পাবেন, আপনার শৈশবের কোমল ত্বক।
দুধ দিয়ে গোসল
প্রাচীনকাল থেকেই গোসলের অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে দুধ। এ ছাড়া সাধারণ বাড়িতেও দুধ দিয়ে গোসলের রীতি রয়েছে। কারণ দুধের ক্লিনজিং ক্ষমতা, অর্থাত্ ত্বক পরিষ্কার রাখার গুণ অতুলনীয়। গোসলের আগে দুধের সঙ্গে সমপরিমাণ পানি, মধু, ল্যাভেন্ডার, এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে রাখতে হবে। এতে মিশ্রণটি কার্যকর হয়। এই মিশ্রণ শরীরের মৃতকোষ, জমে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড দূর করে। যদি দুধ পছন্দ না করেন, তবে পানির মধ্যে এক কাপ মিল্ক পাউডার মিশিয়ে বাথটাবে রেখে দিন। দুধ দিয়ে গোসল করলে গরমকালে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এ ধরনের গোসলে শরীর ও মন দুই-ই ভালোথাকে এবং মানসিক আরামের একটি চমৎকার অবকাশ তৈরি হয়।
এস সি
স্বাস্থ্য | DesheBideshe
2021-06-30 18:05:18
Source link
Leave a Reply