ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য নির্ধারিত খাবার গ্রহণ ও নিয়মিত ব্যায়াম করার পরও অধিকাংশ ক্ষেত্রে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ গ্রহণ করতে হয়। সাধারণত ডায়াবেটিসের ধরন ও রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসকেরা ওষুধপত্র সেবনের নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। অনেকেই জানেন, ডায়াবেটিস সাধারণত দুই ধরনের। যাদের শরীরে (অগ্ন্যাশয় থেকে) ইনসুলিন হরমোন একেবারেই তৈরি হয় না, ফলে বাইরে থেকে ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়, তাদের বলে টাইপ-১ ডায়াবেটিসের রোগী।
আর যাদের শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয় তবে তা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত নয়, তাদের বলা হয় টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগী। এসব রোগীর ক্ষেত্রে ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার ইনসুলিন তৈরির ব্যবস্থা করতে হয়। আবার ইনসুলিন রেজিসটেন্স বলে একটি অবস্থা রয়েছে, সে ক্ষেত্রে শরীরে ইনসুলিন তৈরি হলেও বা বাইরে থেকে তা গ্রহণ করলেও রক্তে ইনসুলিনের ভারসাম্য রক্ষা হয় না।
তখন ইনসুলিন সেনসিটাইজার নামের খাওয়ার ওষুধ গ্রহণ করতে হয়। যেসব রোগী ইনসুলিন নিচ্ছে তাদের ইনসুলিন গ্রহণের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ইনসুলিনের মাত্রা বা ইউনিট এবং সে অনুসারে নির্দিষ্ট সিরিঞ্জ ব্যবহার করা উচিত। মনে রাখা জরুরি, ইনসুলিন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি গ্রহণ করলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। এ অবস্থা থেকে মৃত্যুও হতে পারে। অনেকেই মনে করেন, নির্ধারিত খাবারের চেয়ে একটু বেশি খাওয়া হয়ে গেলে ইনসুলিন একটু বেশি নেওয়া দরকার-এটা একদম ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা না করে কখনোই এটা করা উচিত নয়। মুখে খাওয়ার ওষুধ বিভিন্নভাবে রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এর মধ্যে সালফোনাইল ইউরিয়া গ্রুপ যেমন গ্লিক্লাজাইড, গ্লিমেপিরাইড অন্যতম। এগুলো পর্যাপ্ত ইনসুলিন নির্গমনে সহায়তা করে। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই গ্রুপের ওষুধগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
যাদের ইনসুলিন রেজিসটেন্স রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন সেনসিটাইজার, যেমন পাইওগ্লিটাজোন খুবই কার্যকর। এটা কার্যকরভাবে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়ায়। ডায়াবেটিক হৃদরোগীদের জন্যও এটা বাড়তি পাওয়া বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন।
ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ইনসুলিন বা মুখে খাওয়ার ওষুধগুলো আলাদাভাবে বা একসঙ্গে গ্রহণ করা যায়। তবে চিকিৎসা কখনোই নিজে নিজে নয়, তা হবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী।
শামীম আলম খান
ফার্মাসিস্ট
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ০৭, ২০০৮
Leave a Reply