তারুণ্যের উচ্ছলতাকে সময়ের ফিতায় বাঁধা যায় না। তবু সময় সচেতনতা অনেক সময় শৃঙ্খল না হয়ে স্বাধীনতার স্বাদও দিতে পারে সেটা অনেকেই জানেন। নিয়মমাফিক জীবন পরিচালনার এই ভাবনা নিয়ে তরুণকণ্ঠ’র এবারের আয়োজন-
সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। কিন্তু এ কথা জানার পরেও সময় নিয়ে আমাদের গড়িমসি কি কমেছে? এ প্রশ্নের জবাব বোধকরি অনেকেরই জানা। সময় সচেতনতার জ্ঞানকে আমাদের জীবনে কাজে লাগাতে হবে। আর নিয়মমাফিক জীবন পরিচালনার মধ্যেই সফলতার গুরু রহস্য লুকিয়ে আছে। তরশুণদের জন্য সময় বিষয়ক কিছু বলতে গেলেই অপ্রিয় সত্য হিসেবে সবার প্রথমে এসে যায় পড়াশোনার কথাই। নিজের মনের ইচ্ছেগুলোকে ষোলআনা বজায় রেখে পড়তে গেলে সময়ের দরকার। আবার সময় নিয়ে পড়তে হলে ইচ্ছে স্বাধীন পরিকল্পনাগুলো ভেস্তে যায়। তাহলে এই টানাপোড়েন থেকে মুক্তির উপায় কী? এক্ষেত্রে হয়তো খুব সহজেই বলা যায় ‘টাইম ম্যানেজমেন্ট’-এর নানা তত্ত্বকথা। কিন্তু তারুণ্যের উচ্ছলতা যার নিত্যসঙ্গী, যান্ত্রিক নিয়মের ছকে সে পা দিতে যাবে কোন দুঃখে? তাই যে বয়সে মন পড়ে থাকে খেলার মাঠ কিংবা বন্ধুদের আড্ডায় সেই বয়সে আনন্দ নিয়ে পড়তে হলেও চাই একটা যুতসই রুটিন। তবে এই রশুটিনটা যেন শতভাগ ইচ্ছেবিরোধী কাজের একটা তালিকা হয়ে আস্তাকুড়ে চলে না যায় সেটা ভাবতে হবে তরুণদেরকেই। মা-বাবা হয়তো বলছেন, দিনের ৬ ঘণ্টা পড়া, ৮ ঘণ্টা ঘুম আর ২ ঘণ্টা টিভি দেখার মতো নানা করণীয় কথা। কিন্তু মা-বাবার এই রশুটিন যদি তারুণ্যের রঙিন স্বপ্নের সাথে তাল মেলাতে না পারে তবে কিন্তু পড়ার টেবিলেও মনের মাঝে উঁকি দিতে পারে খেলার মাঠ কিংবা নাটক-সিনেমার গল্প। তা বেশ তো, মা-বাবার বিধি-নিষেধের শেষ গন্তব্য যে পরীক্ষায় একটা ভাল ফলাফল এবং সুন্দর ভবিষ্যৎ সেটা বোধকরি এতোদিনে জানা হয়ে গেছে আপনারও। আপনি ইচ্ছে করলে এই মূল লক্ষ্যটাকে ঠিক রেখে নিজের মতো একটা রুটিন তৈরি করে নিতে পারেন। তাতে মা-বাবাও নিশ্চয়ই আপনার স্বাধীন ইচ্ছেটাতে বাধ সাধতে আসবেন না।
পড়ার বিষয়গুলোকে রুটিনের আওতায় নিয়ে আসবার জন্য সবার প্রথমে একটা ভাল ধারণা থাকা চাই পঠিতব্য বিষয়ের উপর। কোন কোন বিষয়ে কতোটা পড়তে হবে, কোথায় একটু বাড়তি অনুশীলনের দরকার কিংবা কোন বিষয়টি পড়তে গেলে চোখের পাতা জুড়ে ঘুম আসে না ইত্যকার নানা ভাবনা মনের মাঝে ঠাঁই দিতে হবে রুটিন তৈরির আগেই। যেমন ধরুন বিজ্ঞান বিষয়ের একজন ছাত্র বা ছাত্রী হিসেবে আপনার হয়তো দারুণ পছন্দের বিষয় পদার্থবিজ্ঞান। সে তুলনায় অংক আর রসায়নকে মনে হয় দু’চোখের বিষ। তাহলে প্রতিদিনের পড়ার রশুটিনে এ বিষয়গুলোর সমন্বয় করতে হবে বুদ্ধি খাটিয়ে। কেউ কেউ আছে যাদের পড়ার সমস্ত আগ্রহ শেষ হয়ে যায় পড়া শুরুর ঘণ্টাখানেকের মাঝেই। আবার কেউবা কিছুটা সময় টেবিলে বসে থাকার পর নানা চিন্তার গলি ঘুরে তবেই আসতে পারেন পড়ার ভাবনায়। এখন যাদের ক্ষেত্রে মনোযোগটা প্রথম দিকে ভাল থাকে তাদেরকে অপ্রিয় বিষয়টা পড়তে হবে সবার আগে। এতে করে আপনার আগ্রহ আর বিষয়ের প্রতি অনাগ্রহ কাটাকাটি হয়ে একটা দুর্দান্ত ফল এনে দিতে পারে। আর পড়ার একেবারে শেষ দিকে যখন মনোযোগের ঘাটতি লক্ষ্যণীয় তখন প্রিয় বিষয় আপনাকে বাড়তি প্রেরণা যোগাবে আরো কিছু ণ পড়ার টেবিলে সময় কাটাতে। অন্যদিকে পড়তে বসার প্রথম আধঘণ্টা যারা অমনোযোগী থাকেন তারা প্রথমেই শুরু করুন প্রিয় বিষয় দিয়ে। তারপর আস্তে আস্তে খানিকটা অপ্রিয় বা কঠিন বিষয়ের পড়া দিয়ে শেষ করুন। প্রায় প্রতিটি মানুষেরই একটানা কাজের একটা সাধারণ সীমা থাকে। তরুণদেরও তাদের এই সীমা সম্পর্কে জানতে হবে। যেমন কেউ হয়তো এক বসায় দু’ঘণ্টা পড়তে পারছেন আবার কেউবা আধঘন্টা। এক্ষেত্রে এক বসায় যতোক্ষণ পড়া আরামদায়ক সেই সময়টুকু পড়ে পাঁচ-দশ মিনিটের বিরতি নিতে হবে। আর এই বিরতিতে নিজেকে উৎসাহিত বা অনুপ্রাণিত করে এমন কোনো কাজ করে তবেই ফিরতে হবে পড়ার ভুবনে। পরী ায় ভাল ফল করতে হলে প্রতিদিনের রুটিনটা যেমন অনুসরণ করা জরুরি তেমনি সপ্তাহ, মাস কিংবা বছরেরও একটা প্রাথমিক পরিকল্পনা রাখা জরুরি। এতে করে সিলেবাসের বোঝাটা যেমন হালকা করা যায় তেমনি অনুপ্রেরণা পাওয়া যায় পড়াশোনারও। সারা সপ্তাহের কোন দিন কোন বিষয়টি পড়লে ক্লাসের পড়ার সাথে সামঞ্জস্য রাখা সহজ হবে সেই ভাবনা থেকেই তৈরি করতে হবে সপ্তাহের রুটিন। আর একবার রুটিন তৈরি হয়ে যাবার পর তা অবশ্যই কাগজে লিখে বড় করে টানিয়ে রাখতে হবে পড়ার টেবিলের সামনে। এর লাভ দু’টি। প্রথমত এতে করে প্রতিবার রশুটিন দেখলে নিজের মনের মাঝে যেমন একটা তাগিদ তৈরি হবে। দ্বিতীয়ত অভিভাবকেরা আশ্বস্ত হবেন যে তাদের সন্তান রুটিন মেনে পড়াশোনা করছে। তবে এক্ষেত্রে রুটিন যেন শুধু লিখিত ছক হয়েই পড়ে না থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে আপনাকেই।
টিভি দেখার মতো বন্ধুদের আড্ডা বা খেলার সময়কেও আনা যেতে পারে রুটিনের আওতায়। সাধারণত অভিভাবকেরা কিছু সময়কে পড়ার সময় বলে আলাদা করে ভাবেন। যেমন সন্ধ্যা থেকে রাতের খাবার আগ পর্যন্ত বা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবার আগ পর্যন্ত। কাজেই এ সময়গুলো বাদ দিয়ে বিকেল এ একটি নির্দিষ্ট সময় মেনে যেতে হবে খেলা কিংবা আড্ডায়। প্রয়োজনে অভিভাবকের সাথে কথা বলে তাদের সম্মতি নিয়েই ঠিক করতে হবে এ সময়টুকু। সেই সাথে অন্য বন্ধুদেরও বোঝাতে হবে সময় মেনে আড্ডা দেয়ার বিষয়টি। এভাবে মাসে কিংবা বছরে একবার বেড়াতে যাওয়া কিংবা বন্ধুরা সবাই মিলে কোনো গেট-টুগেদার করা ইত্যাদি বিষয়ও আগে থেকে গুছিয়ে রাখলে এবং তা হাতে সময় রেখে বাসায় জানালে পড়ার পাশাপাশি মনের ইচ্ছে পূরণে কোনো বাধা থাকবে না। তবে একটি কথা খেয়াল রাখতে হবে, নিয়মমাফিক চলার জন্য রুটিন অনুসরণ করার অভ্যাস করাটা জরুরি।
খালেদ আহমেদ
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জানুয়ারী ২৩, ২০১০
Alim mahmud
GOOD IDEA