চারদিকে নানা রঙের খেলা। মেঝেতে বাঁশের ঝুড়িতে রাখা রংবেরঙের কাপড়ের টুকরার পসরা সাজানো, সারি সারি বোতলে রাখা হয়েছে কত রকম রং তার বর্ণনা বলে শেষ করা যাবে না। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, গোলাপি কী নেই সেখানে!
ফ্যাশন হাউস রঙের ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত একটি প্রদর্শনীর দৃশ্য এটি। ১৫ জানুয়ারি ‘রঙধনু’ শিরোনামের এ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে। প্রদর্শনীটি চলছে জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনীকক্ষে। অনুষ্ঠানে রঙ-এর প্রতি শুভকামনা জানান প্রধান অতিথি খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক। এ সময় রঙের উদ্যোগে তিন রঞ্জনশিল্পী রাজা চন্দ্র চাকমা, মন্টু চন্দ্র দাশ ও শহিদুল ইসলামকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর, শিল্পী হাসেম খান, সাংসদ সারাহ্ বেগম কবরী, সমালোচক প্রাবন্ধিক মাইনুদ্দীন খালেদ, ডিজাইনার চন্দ্র শেখর সাহা, রঙের পরিচালক বিপ্লব সাহা, সৌমিক দাশসহ আরও অনেকে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর আমন্ত্রিত অতিথিরা পেঁচানো সাদা সুতা রঙে ডুবিয়ে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এর পরপরই সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয় প্রদর্শনীটি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফারাহ শারমীন।
প্রদর্শনীতে দেখা গেল চরকায় পেঁচানো রং-বেরঙের কাপড়ে রঙের এক ছান্দিক বিন্যাস। যেন এটি কোনো তাঁতিপাড়া। এর পরে একে একে সাজানো ইট, পাথর, শামুক, ঝিনুক ও প্রবালগুলো। ডালায় ডালায় শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন রঙের শিমের বিচি, ধান, নানা বর্ণের চালসহ বিভিন্ন সবজি ও গাছের বীজ। এগুলো দেখে মনে হয়, কত বিচিত্র রং মিশে আছে প্রকৃতিতে ও আমাদের চারপাশের জগতে। বস্তায় সাজিয়ে রাখা রঙিন তুলা পেরিয়ে চারদিকের দেয়ালে চোখ পড়ে। সাঁটানো স্থিরচিত্রে সাত রঙের ব্যবহার মুগ্ধ করে মনকে। এরপর রঙিন পালক, কয়েক পদের কাঠ, রঙিন বেশ কয়েক ধরনের বল, রঙিন সুতা ও সুতার গুঁটি দেখে সামনে এগোতে হলো। পাশাপাশি চুড়ি, ফিতা, মাটির হাঁড়ি, হাতপাখা, লক্ষ্মীসরা, নকশিকাঁথা, পাপস, মাটির কয়েক রকমের খেলনা, টুপি—এসব দেখে মনে হলো গ্রামবাংলার সেই চির পরিচিত কোনো মেলায় এসে পড়লাম!
৪৭টি স্থাপনায় তুলে ধরা হয়েছে আমাদের জীবন ও প্রকৃতিতে রঙের প্রতিফলন।
রঙের পরিচালক বিপ্লব সাহা জানালেন, ‘আমাদের জীবনে রঙের যে কত প্রভাব তার ধারণা দিতেই এ রকম একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। ডিজাইনার চন্দ্র শেখর সাহা ও চিত্রশিল্পী হাসেম খান বললেন, এ রকম প্রদর্শনীতে এসে মনে অন্তত এ ভাবনাটি উদয় হবে, চারদিকে রঙের ব্যবহার কেমন ও আমাদের জীবনে রং কী রকম জায়গা দখল করে আছে। প্রদর্শনীর এক ফাঁকে হাজির হন প্রবীন চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। ঘুরে দেখেন প্রদর্শনী কক্ষজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রঙের নানা ব্যবহার।
প্রদর্শনী চলবে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সকাল নয়টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল চারটা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার বন্ধ। শুক্রবার চলবে বিকেল তিনটা ৩০ মিনিট হতে সাত টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত।
মোছাব্বের হোসেন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১৯, ২০১০
Leave a Reply