ঘুম আসে না? নিঝুম রাতের অন্ধকারেও দু’চোখের পাতা এক হয় না বেশিক্ষণ?
সাবধান!
আপনার হৃদয়ের ওপর চাপ ফেলতে পারে এই অপ্রতুল ঘুম।
শোনা যায়, হৃদয় ভাঙলে ঘুম চলে যায়। কিন্তু কম ঘুমও হৃদয় ভাঙতে পারে। মার্কিন বিজ্ঞানীরা এমনই বলছেন। তাদের দাবি, ঘুম কম হলে হৃদ্রোগের সম্ভাবনা বাড়ে। করোনারি ধমনীতে বাড়ে ক্যালশিয়াম অধঃক্ষেপের পরিমাণও। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক গবেষণার পর জানিয়েছেন, কম ঘুমের ফলে ক্ষতিকারক ক্যালশিয়াম জমে হৃদ্পিণ্ডে রক্ত সঞ্চালনকারী শিরা ও ধমনীতে। এর থেকে হার্ট অ্যাটাক-সহ বিভিন্ন হৃদ্রোগে আক্রান্ত হতে পারেন মধ্যবয়সীরা। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে।
পরীক্ষা চালাবেন বলে গবেষকরা ৪৯৫ জন লোককে বেছে নেন বছর পাচেক আগে, যাদের বয়স ৩৫ থেকে ৪৭ বছরের মধ্যে। এই ভলািন্টয়ারদের কারও হৃৎপিণ্ডে কোনও সমস্যা ছিল না, ধমনী বা শিরায় ক্যালশিয়াম জমতে শুরু করেনি তখন। তাদের একটি বড়সড় প্রশ্নাবলি দেওয়া হয়। তারা প্রতিদিন সাকুল্যে কত ঘণ্টা ঘুমোচ্ছেন, তার লিখিত হিসেব রাখেন। ঘুমনোর সময় এই ৪৯৫ জনের হাতে বেধে দেওয়া হয় ‘মোশন সেিন্সং’ যন্ত্র। ঠিক কত ক্ষণ তারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকেন, তা মেপে দেয় ওই যন্ত্র।
পাচ বছরের ব্যবধানে ঘুমের সঙ্গে হৃৎপিণ্ডের এক রহস্যময় সম্পর্ক উদ্ঘাটন করেছেন ডায়ান এস লওডারডেলের নেতৃত্বাধীন গবেষকরা। গবেষণায় কী দেখা গিয়েছে?
যাদের ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে, তাদের ২৭ শতাংশের করোনারি ধমনীতে প্রথম বার ক্যালশিয়াম জমা শুরু হয়েছে। এদের সকলেরই ঘুম দিনে গড়ে ৫ ঘণ্টার কম। অথচ যে সমস্ত মানুষ দিনে গড়ে ৭ ঘণ্টার বেশি ঘুমিয়েছেন, তাদের মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশের ক্ষেত্রে ক্যালশিয়াম জমেছে, তা-ও পরিমাণে অনেক কম। আর গড়ে যাদের রাতে ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুম, তাদের ১১ শতাংশের করোনারি ধমনীতে ক্যালশিয়াম জমেছে।
একটু ঘুমের জন্য
–ঘুম না পেলে জোর করে শুতে যাবেন না
–শোওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে ঘুম না-এলে উঠে পড়ুন
–যতক্ষণ না ঘুম পায়, বোরিং কিছু করুন
–যখন তখন অল্প সময়ের জন্য ঘুমোবেন না
–রোজ একই সময় শুতে যান, একই সময় উঠুন
–শোওয়ার আগে ব্যায়াম করবেন না
–ঘুম আনার জন্য শরীর-মনকে রিল্যাক্সড রাখুন
–ঘুমনোর আগে চা, কফি, সিগারেট, মদ খাবেন না
–ঘুমনোর আগে হাল্কা খাবার খান
–শুতে যাওয়ার আগে গরম জলে স্নান করুন
হৃদরোগের আরও অনেক কারণ, নমুনা ও দৃষ্টান্ত খতিয়ে দেখে গবেষকরা নিদান হাকছেন— ‘প্রতি রাতে ১ ঘণ্টা বেশি ঘুম হলে ক্যালশিয়াম অধঃক্ষেপ কমে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে কমবে হৃদ্রোগের আশঙ্কা।’ এ সপ্তাহে ‘জার্নাল অফ আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এ প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্রটি। শিরোনাম— ‘করোনারি আর্টারি রিস্ক ডেভেলপমেন্ট ইন ইয়ং অ্যাডাল্টস’। তবে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারের অধ্যাপিকা লওডারডেল অনেকটা সতর্ক করার ঢঙে বলেছেন, ‘‘কেউ যেন না ভাবেন যে আমরা কম ঘুমের সঙ্গে হৃদ্রোগের সম্পর্ক টানতে এই গবেষণা করেছি। পাচ বছর গবেষণার পর যে ডেটা পাওয়া গিয়েছে, তা থেকে আমরা প্রথম রিপোর্টটি তৈরি করছি। এটা থেকে কোনও সিদ্ধােন্ত আসা যায় না।’’ তার বক্তব্য, যতক্ষণ না পর্যন্ত ঘুম এবং হৃদ্রোগের মধ্যে বৈজ্ঞানিক যোগাযোগ প্রমাণিত হচ্ছে, শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন নথিভুক্ত হচ্ছে, তত ক্ষণ অযৌক্তিক দাবি করবেন না তারা। তারা শুধু বলছেন, ঘুম কম হলে রক্তচাপ বাড়ে, বাড়ে েষ্ট্রসধমনীতে ক্যালশিয়াম জমেছে।
হৃদরোগের আরও অনেক কারণ, নমুনা ও দৃষ্টান্ত খতিয়ে দেখে গবেষকরা নিদান হাকছেন— ‘প্রতি রাতে ১ ঘণ্টা বেশি ঘুম হলে ক্যালশিয়াম অধঃক্ষেপ কমে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে কমবে হৃদ্রোগের আশঙ্কা।’ এ সপ্তাহে ‘জার্নাল অফ আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এ প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্রটি। শিরোনাম— ‘করোনারি আর্টারি রিস্ক ডেভেলপমেন্ট ইন ইয়ং অ্যাডাল্টস’। তবে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারের অধ্যাপিকা লওডারডেল অনেকটা সতর্ক করার ঢঙে বলেছেন, ‘‘কেউ যেন না ভাবেন যে আমরা কম ঘুমের সঙ্গে হৃদ্রোগের সম্পর্ক টানতে এই গবেষণা করেছি। পাচ বছর গবেষণার পর যে ডেটা পাওয়া গিয়েছে, তা থেকে আমরা প্রথম রিপোর্টটি তৈরি করছি। এটা থেকে কোনও সিদ্ধােন্ত আসা যায় না।’’ তার বক্তব্য, যতক্ষণ না পর্যন্ত ঘুম এবং হৃদ্রোগের মধ্যে বৈজ্ঞানিক যোগাযোগ প্রমাণিত হচ্ছে, শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন নথিভুক্ত হচ্ছে, তত ক্ষণ অযৌক্তিক দাবি করবেন না তারা। তারা শুধু বলছেন, ঘুম কম হলে রক্তচাপ বাড়ে, বাড়ে েষ্ট্রস হরমোন কর্টিজলের ক্ষরণ। তা থেকেই আশঙ্কা বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের।
ঘুম নিয়ে গবেষণার ধুমধাম চিরকালই। এর আগেও বিভিন্ন বিজ্ঞানী বলেছেন, কম ঘুমের ফলে হৃদ্রোগ বা মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ে। কিন্তু এর আগে এত পরিষ্কার ভাবে কোনও গবেষক তথ্য দিয়ে ঘুম আর হৃদ্রোগের সম্পর্ক মাপেননি। তবে কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় গবেষক সঞ্জয় পটেল আবার বলছেন, েস্বচ্ছাসেবকরা কতটা বৈজ্ঞানিক ভাবে নিজেদের পর্যবেক্ষণ করেছেন, তা নিয়ে সেন্দহ থাকছে। তাই লওডারডেলের হিসেব নিয়েও তিনি সিন্দহান।
তার কথায়, যারা প্রচুর স্বপ্ন দেখেন, মাঝেমধ্যেই পাশ ফেরেন, হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়, তাদের ঘুমও গাঢ় হয় না। সমস্যা হয় তাদের শরীরেও। অধুনিক জীবনযাত্রায় কাজের চাপ, পড়াশোনার ধকল, অতিরিক্ত েষ্ট্রস বা জটিল জীবন পদ্ধতি কম ঘুমের জন্য দায়ী। ‘‘কম ঘুমোন বলে ওষুধ দিলে অনেকে ৮-১০ ঘণ্টা ঘুমোন। কিন্তু তাতেও তাদের েষ্ট্রস কমে না। কর্টিজল ক্ষরণ কমে না। তা হলে? েষ্ট্রস থেকে হৃদ্রোগের আশঙ্কা ঘুমোলেও থাকছে,’’ যুক্তি সঞ্জয়ের।
তবে ঘুম কম হলে যে শরীর খারাপ হয়, তা নিয়ে মোটামুটি একমত বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ঘুমে দীক্ষা নিতে। নিদ্রাহারা রাতের গান শুনে প্রহর কাটালে হৃদয় খান খান হওয়ার ভয় থাকে যে!
সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৮ ডিসেম্বর ২০০৮
Leave a Reply