হাসপাতালে চিকিৎসা করতে যাওয়া রোগীদের বাইরে থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে বাধ্য করানোর অভিযোগ উঠেছে জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। রবিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঘটনাটি ঘটেছে। অভিযোগ, এ দিন বেলা ১১ টা নাগাদ কোচবিহারের তুফানগঞ্জ এবং মালদহ থেকে হাত ভাঙা দুই জন রোগীকে পরিবারের লোকেরা চিকিৎসা করাতে জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। রবিবার হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ বন্ধ রয়েছে জানিয়ে দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবার জন্য বাইরে থেকে ওই সমস্ত পরীক্ষা করাতে বলেন। পরের দিন হাসপাতালে ওই সব পরীক্ষা করানোর জন্য রোগীর পরিবারের লোকেরা বললেও চিকিৎসক তাদের জানিয়েদেন জরুরি ওই সমস্ত পরীক্ষা না করানো থাকলে দরকারে এ দিন রাতে চিকিৎসক অেস্ত্রাপচার করতে পারবেন না। এর পরই চিকিৎসকের বলে দেওয়া নির্দিষ্ট জায়গা থেকে পরীক্ষা করতে বাধ্য হন রোগীর আত্মীয় পরিজনেরা। কিন্তু সোমবারেও চিকিৎসা পরিষেবার তেমন অগ্রগতি না-হওয়ায় তারা হাসপাতালের সুপারকে অভিযোগ জানান। স্থানীয় কিছু বাসিন্দার নজরে পড়ায় তারাও সুপারকে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েছে। ঘটনার নিন্দা করেছেন মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার কাউিন্সলের সদস্যরাও। হাসপাতালের সুপার সমীর ঘোষ রায় বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। সংিশ্লষ্ট চিকিৎসক দাবি করেছেন, দ্রুত চিকিৎসার জন্য রোগীর পরিবারের লোকেরাই তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন বাইরে থেকে পরীক্ষা করানো যায় কি না। তাই তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার তুফানগেঞ্জর কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সুব্রত দাস এবং মালদহের বাসিন্দা ৫৫ বছরের কিশোরী হালদারকে হাতভাঙা অবস্থায় জরুরি বিভাগে নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা। কিশোরীবাবুর চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল কলেজের সুপার সুপারিশ করেও পাঠিয়েছিলেন। সুব্রতকে রেফার করা হয়েছিল তুফানগঞ্জ হাসপাতালা থেকে। সুব্রতর দাদু ধীরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘আমরা হাসপাতালেই সমস্ত পরীক্ষা করাতে বলি। রবিবারে হাসপাতালে কোনও পরীক্ষা হবে না জানিয়ে চিকিৎসক বাইরে থেকে বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে বলেন। কোথা থেকে করাতে হবে তা চিরকুটে লিখে দেন। তাই বাধ্য হয়ে করাতে হয়েছে। হাসপাতালে যে সব চিকিৎসা সোমবার করানো যেত তা কেনও এ ভাবে টাকা খরচ করে বাইরে থেকে করাতে হল বুঝতে পারিছি না।’’ একই ভাবে কিশোরীবাবু বিভিন্ন পরীক্ষা বাইরে থেকে করানো হয়েছে। হাসপাতালের কর্মীদের এক সূত্র জানিয়েছেন, এইচআইভি পরীক্ষা, রক্তে শর্করার পরিমাণ নির্ণয়-সহ ওই সব পরীক্ষা হাসপাতালেই করানো যেত। প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চিকিৎসকদের যোগাসাজশ রয়েছে বলেই বাইরে থেকে তা করাতে বলেন। দিন কয়েক আগে সবিতা বালা নামে কোচবিহারের খোলটার বাসিন্দা এক কিশোরীকে চিকিৎসা না-করিয়ে ছুটি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সবিতার মা গীতাবালা দেবী হাসপাতালের সুপারকে তা জানানোয় এবং সংবাদ মাধ্যমের কাছে মুখ খোলায় চিকিৎসকদের একাংশ এখন তাকে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘পেটব্যথার জন্য আলট্রা সোনোগ্রাফি করানোর প্রয়োজন হলেও এক্সরে করানোর জন্য লিখে পাঠিয়েছিল চিকিৎসক। তা দেখে এক্সরে করানো হলে এখন ফের আলট্রাসোনোগ্রাফি করাতে বলছেন। চিকিৎসকরা দুর্ব্যবহার করছেন, কী করব বুঝছি না।’’ চিকিৎসার যাতে কোনও গাফিলতি না হয় সেই ব্যাপারে হাসপাতালের সুপার আশ্বাস দিয়েছেন।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৩ ডিসেম্বর ২০০৮
শিলিগুড়ি
Leave a Reply