হাইলাইটস
- আলেকজান্ডার আর ভিক্টোরিয়া প্রথমের দিকে এতটা হয়তো বোঝেনি।
- কিংবা একসঙ্গে টয়লেট যাওয়াটাকেও হেব্বি রোম্যান্টিক কিছু ভেবে নিয়েছিল।
- কিন্তু বাস্তব যে বড়ই নির্মম
আলেকজান্ডার আর ভিক্টোরিয়া প্রথমের দিকে এতটা হয়তো বোঝেনি। কিংবা একসঙ্গে টয়লেট যাওয়াটাকেও হেব্বি রোম্যান্টিক কিছু ভেবে নিয়েছিল। কিন্তু বাস্তব যে বড়ই নির্মম। কাহাতক একসঙ্গে টয়লেট করা যায়। আর এই কারণেই দুজনের ব্রেক আপ হয়ে গেল।
এই যে এত ভনিতা করা হল এর পিছনে আছে কিন্তু লম্বা ইতিহাস। গতবছর থেকেই গোটা বিশ্বে তো করোনার হামলায় নাজেহাল। দু-দণ্ড কোথাও যাওয়ার শান্তি নেই। রোগের ভয় সকলকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। বছরের বিশেষ বিশেষ দিন মানে দুর্গাপুজো, বড়দিন, ঈদ, ভ্যালেন্টাইন্স ডে, জন্মদিন, অ্যানিভার্সারির পার্টি সব মাঠে মারা যাচ্ছে। এই সময়ই নতুন কিছু করার আইডিয়া আসে ইউক্রেনের বাসিন্দা ৩২ বছরের আলেকজান্ডার আর ২৯ বছরের ভিক্টোরিয়ার মনে। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-কেই উপলক্ষ করে তারা। সেই দিন দুজন দুজনের হাত শিকল দিয়ে বাঁধে। মানে আলেকজান্ডারের ডান হাত এবং ভিক্টোরিয়ার বাঁ হাতটি একসঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলে তারা। শুরু হয় ভালোবাসা উজ্জাপন।
ইউক্রেন তো বটেই গোটা দুনিয়াতেও এমন নজির মেলে কিনা সন্দেহ। সে যাই হোক সোশ্যাল মিডিয়ায ফলাও করে শিকল বাঁধা প্রেম কাহিনির গল্প জানায় তারা। বলে, “সারা জীবন এভাবে বন্ধনে থাকতে চাই আমরা”। কিছু হুজুগে মানুষ সাধুবাদ জানায় (তাঁদের কী যুক্তি ছিল কে জানে)। কিন্তু বাস্তববাদীরা এ ওর পানে চায়। “এ আবার কেমন প্রেম? বুদ্ধিসুদ্ধি একেবারে গেছে নাকি? এভাবে দুজন দুজনের সঙ্গে শিকলবদ্ধ থাকলে দিন চলবে কী করে?”
ওই দম্পতি অবশ্য ‘মন্দ’ লোকের কথায় কান দেননি। দিন যায়, রাত যায়, ফেব্রুয়ারি যায়, মার্চ যায়, এপ্রিল, মে-ও গেল। খাওয়া দাওয়া, রান্নাবান্না, জামা-কাপড় কাচা, শোওয়া, সবকিছু চলল একসঙ্গে। এবার ধীরে ধীরে লকডাউন খুলল। একসঙ্গে বেড়াতে বেরোলো দুজন। গেল শপিং মলে। কেনাকাটা অবধি ঠিক ছিল। কিন্তু লেডিজ টয়লেটে আলেকজান্ডারকে নিয়ে ঢুকে পড়ত ভিক্টোরিয়া। ট্রায়ালরুমেও একই অবস্থা। অস্বস্তিতে পড়তে হল আলেকজান্ডারকে। কেউ কেউ তাদের দেখে, “ওমা কি সুইট” মন্তব্য করলেও ‘সুইটনেস্’র মাহাত্ব ওরা এতদিনে টের পেতে শুরু করেছে।
ধীরে ধীরে দুজনেই ক্লান্ত হতে শুরু করে। আর তো পারা যায় না। দুজনের কোনও ব্যক্তিগত মুহূর্ত নেই। সবসময় একসঙ্গে। একজনের নিজস্ব ইচ্ছে পূরণ করতে গেলে তা অপরজনের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এক ছাদের নীচে দিনের পর দিন থাকতে থাকতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই ঝগড়াঝাঁটি মনো মালিন্য হয়ে থাকে। আর এ তো একেবারে শিকলি বাঁধা দশা। মানে ঝগড়া করার পর আবার ওই মানুষটার মুখই দেখতে হবে।
এ তো মহা বিপদ। অবস্থা এমন হয় যে ভিক্টোরিয়াকে কাজ খোয়াতে হয়। কারণ সে যা কাজ করে তাতে বয়ফ্রেন্ড পাশে বসে থাকলে ক্লায়েন্টরা বিরক্ত হন। কাজ হারিয়ে শুরু হয় আর্থিক অনটন। এদিকে বাড়িতে সারাদিন খিটিমিটি লেগেই আছে।
অবশেষে ১২৩ দিন পর হাতের শিকল খোলে তারা। যে জায়গায় গিয়ে হাতে শিকল পরেছিলেন সেখানেই শিকল খোলেন। শিকল ভাঙাল পর সম্পর্কও ভেঙে দেয় তারা।
শিকল আর সম্পর্ক ভাঙার পর ভিক্টোরিয়া আনন্দে লাফাতে লাফাতে বলেন, “হুররে, এবার আমি মুক্ত।” এমন প্রতিক্রিয়াই স্বাভাবিক।
বরং আলেকজান্ডার সোশ্যাল মিডিয়ায় খানিকটা মেলোড্রামা করে ফেলে। যেন তেন প্রকারেণ বোঝাতে চায় যে ভিক্টোরিয়ার কারণেই ব্রেক আপ হয়েছে। বুদ্ধিমানরা অবশ্য সবটাই বুঝেছে।
একটা সম্পর্ককে যে এভাবে শিকলে বাঁধা যায় না তা যে কোনও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষই জানেন। এর জন্য মনোবিদের পরামর্শের দরকার পড়ে না। আলেকজান্ডার আবার ইউক্রেনবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে তাদের ১২৩দিন ধরে সমর্থন করার জন্য। ঈশ্বর জানেন কিসের সমর্থন? ভাবটা এমন যেন বীর আলেকজান্ডার দেশ জয় করে দেশে ফিরেছে। সে যাই হোক সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা খোরাক পেলেই যথেষ্ট। ইউক্রেনে এখন আলেকজান্ডার-ভিক্টোরিয়ার প্রেমকাহিনি এখন রীতিমতো হাসির খোরাকে পরিণত হযেছে।
অস্বাভাবিক প্রেমকাহিনি লোকের কাছে ফলাও করে বলে বেরোলে খোরাক তো হবেই, তা সুদূর ইউক্রেনের দম্পতি হোক বা পশ্চিমবঙ্গের।
তবে সব ভালো যার শেষ ভালো তার। আলেকজান্ডার এবং ভিক্টোরিয়া আপাতত শিকলি বাঁধা হাতের অংশ ব্যথার মলম ঘঁষছে। আর চেষ্টা করছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে। এবার বরং তাদের শুভকামনা দেওয়া যেতে পারে।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-06-23 18:55:17
Source link
Leave a Reply