নমাজ শেষে সমবেত মানুষকে কাছে ডেকে তিনি বলছিলেন, ‘‘ইনসাল্লা, এ বার কিছু অন্য কথা বলি। আপনারা সকলেই পানির (জল) প্রয়োজনীয়তা জানেন। কারবালার প্রান্তরে হাসান-হুসেন পানির অভাবে কতটা কষ্ট পেয়েছিলেন তা-ও আপনারা জানেন। কিন্তু মনে রাখবেন, কোনও সময়েই খারাপ পানি খাবেন না। সবসময় বিশুদ্ধ পানি খাবেন। আর তাই গ্রামের নলকূপ আর্সেনিকমুক্ত কি না, তা যাচাই করে নিন।’’
জনস্বাস্থ্য দফতরের কোনও কর্তা নন। তিনি ইমাম। আর্সেনিকের ভয়াবহতা বোঝাতে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদের গ্রামে এখন তারাই ওই দফতরের শেষ ভরসা। মসজিদে নমাজ শেষে তারা তাই ধর্মকথা কম বলছেন। বেশি বলছেন আর্সেনিকের কথা। পাল্স পোলিও-র পরে সংখ্যালঘু অধুষ্যিত এলাকায় সচেতনতার প্রেশ্ন জনস্বাস্থ্য দফতর তাই গ্রামীণ ইমামদেরই শরণাপন্ন হয়েছে।
এর আগে মুর্শিদাবাদ জেলায় পাল্স পোলিও সফল করতেও ইমামরা পথে নেমেছিলেন। সরকারি হিসাবই বলছে, ইমামদের প্রচারের পর মুর্শিদাবাদে পোলিও খাওয়ানোর শতকরা হার বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তাই স্বাস্থ্য দফতরের পথেই হাটছে জনস্বাস্থ্য দফতর। আপাতত লালগোলা ব্লকের ১২টি পঞ্চায়েত এলাকায় ইমামদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। এ কাজে সরকারি ওই দফতরকে সাহায্য করছে বেশ কয়েকটি েস্বচ্ছাসেবী সংস্থা।
লালগোলার দেওয়ানসরাই পঞ্চায়েতের চকপাড়া মসজিদের ইমাম মহম্মদ আজিজুর রহমান। আশপাশের গ্রামগুলিতে তিনিই শেষ কথা। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ একটু সচেতন হলেই আর্সেনিকের মতো রোগের হাত থেকে বাচতে পারেন। কিন্তু পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজ এ ব্যাপারে সচেতন নয়। অনেকেই ‘কী আর হবে’ গোছের মানসিকতা নিয়ে আর্সেনিকযুক্ত পানি খাচ্ছেন। গ্রামবাসীদের সচেতন করতে প্রতিটি মসজিদে প্রচার চালানো হবে।’’ আর সুদর্শনগঞ্জ জুম্মা মসজিদের মৌলানা মহম্মদ আব্দুল হাইয়ের গলায় অবশ্য অনুযোগের সুর। তিনি বলেন, ‘‘এত দিন আমাদের উপেক্ষা করা হত। এখন যে সমাজ সচেতনতার কাজেও ইমামদের ব্যবহার করা হচ্ছে, এটা শুভ উদ্যোগ। আমাদের কথায় পাল্স পোলিও খেয়েছে গ্রামের মানুষ। আশা করি, এ ব্যাপারেও সাফল্য মিলবে।’’
মুর্শিদাবাদ জেলা জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার অজয় কুণ্ডু জানান, গত চার বছর ধরে ওই দফতরের হয়ে ওই জেলায় পরীক্ষামূলক ভাবে কাজ করছে বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাদেরই একটি ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টিয়ার অ্যাসোসিয়েশন। ওই সংগঠনের পক্ষে কবিতা মাইতি বলেন, ‘‘ইমামদের কথাকে সাধারণ মানুষ অমোঘ বলে মানেন। আর তাই তাদের কথাকে নির্দেশ বলেই জ্ঞান করেন গ্রামবাসীরা। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কাছে আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে ইমামদের কথা।’’
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৩ ডিসেম্বর ২০০৮
Leave a Reply