এই বছর বর্ষা একটু আগেই ঢুকেছে হয়তো। টানা চারদিন ধরে বৃষ্টিতে ঘর বন্দি। লকডাউন অার তার সাথে বৃষ্টি, রুজি রোজগার বন্ধ করে কতদিন অার ঘরে থাকা যায়! খুব কাছের একজন ব্যক্তির নাতিকে সাপে কামড়েছে শুনে আমি গতকাল গেছিলাম ডায়মন্ড হারবার। বাচ্চাটি এখন ভালো আছে। গ্রামে এখনও প্রতি বছর প্রচুর মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়।
সকালে বাড়ি থেকে ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পরলাম।
ই এম বাইপাস হয়ে জোড়া ব্রিজ পেরিয়ে বারুইপুর বাইপাস ধরে আমতলা হয়ে আঁকাবাঁকা পথ ধরে চলে যাই দক্ষিণের জলের দেশে। হ্যাঁ,ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ নামখানা।সকাল নয়টায় পৌঁছে সাগরিকার উল্টো দিকে গঙ্গার ধারের ঝুপড়ি দোকানে ঘুগনি মুড়ি আর ডিমের ওমলেট খেলাম। ট্রেন, দূরপাল্লার বাস এখনও বন্ধ, করোনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই নিজ গাড়ি ছাড়া এখন বাড়ি থেকে বেরোনো উচিত নয়। একঘেঁয়ে আতংক কাটিয়ে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে বেরিয়ে ছিলাম। বাইরে রাত্রি বাস করবো না এখন। এটাই ছিল সাবধানতার অঙ্গ। সাথে নিয়েছিলাম- মাস্ক, স্যানিটাইজার, গ্লাভস, টুপি,পায়ে মোজা, জুতো। খাবার হিসাবে ফ্লাক্স ভর্তি গরম জল, চা পাতা,চিনি,কফি, শুকনো খাবার।
আকাশে ভরপুর মেঘ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম।
এখানে বলে রাখি যে এই সুন্দর রাস্তাটা এখন অতি বেহাল পর্যায়ে আছে। প্রচুর বড়ো বড়ো হাউসিং কমপ্লেক্স হচ্ছে, তাই ভারী ভারী লরি যাতায়াত করায় রাস্তা আর এই অত্যাচার সহ্য করতে পারছেনা। দুদিকে চওড়া রাস্তা মাঝে বেশ হৃষ্টপুষ্ট একটা খাল। ও হ্যাঁ, এই পথে যেতে যেতে বেশ কয়েকটা গোসাপ চোখে পড়েছিল, গতরে বেশ নাদুসনুদুস। বুঝলাম এই খালে মাছের বসবাস আছে।
পথে আসতে আসতে মনে হচ্ছিল আমরা যেনো বেমানান কিছু মানুষ, মুখ চোখ ঢেকে চলেছি। এদিকে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে কোনো করোনা আতংকের চেতনা নেই। মাস্ক এর বালাই নেই করো মুখে। কোথায় সামাজিক দূরত্ব, একে অন্যের ঘাড়ে উঠে যেনো চলেছে। ডায়মন্ড হারবারে দেখলাম সচেতন মানুষ প্রচুর আছে।
গঙ্গার ধারের চেয়ার গুলো দখল করলাম . এক মনে দেখছি , কেমন গঙ্গা গুটি গুটি পায়ে সমুদ্রের কাছে ধরা দিতে চলেছে। গঙ্গার ওপারটাতে হলদিয়া শহর, বাষ্পীয় চশমা থেকে দেখার মতো ঝাপসা লাগছে, দুএকটা ছোট জাহাজ জেলেদের নৌকো আর মাল বহনকারী বার্জ চলেছে তাদের গন্তব্যতে । সারা বছর ধরেই পর্যটকদের আনাগোনা থাকে ডায়মন্ড হারবার । এ ছাড়াও বকখালি ৭৫ কিমি., রায়চক ও সামনে. দিঘার মতো পাল্লা দিয়ে সেজে উঠছে ডায়মন্ড হারবার।
নদী পার ধরে পর্যটকদের বসার আসন, ফুটপাত লাইট , পরিস্কার রাস্তা সব হয়েছে নতুন পার্ক সেখানে বোটিং করা যায় ভালো ভালো হোটেল হয়েছে তবুও সেই ভাবে পর্যটক আসে না. ডায়মন্ড হারবারের আকর্ষণ বলতে ছিল পুরাতন কেল্লা। ব্রিটিশ আমলে তৈরি কেল্লাটি আজ নদী গর্ভে , কোনও অস্তিত্ব নেই। কটা স্তম্ভ পরে আছে শুধু। কলকাতা থেকে আগে প্রচুর মানুষ পিকনিক করতে আসতো এখন বেশি আসেনা।
রাজ্য সরকার৷ উদ্যোগ নিয়ে পর্যটন ,সেচ, বন দপ্তর মিলে এক সাথে এই অঞ্চলটিকে একটা পর্যটনের আকর্ষণ তৈরী করবার চেষ্টা করছে, বিশাল চওড়া এই নদীর উপরে প্রায় দু কিলোমিটার লম্বা ব্যালকনি করে দিচ্ছে নদীর পার ধরে জেটিঘাট থেকে কেল্লার মাঠ পর্যন্ত। রকমারি আলোকসজ্জায় মুড়ে ফেলা হবে সেই অত্যাধুনিক ব্যালকনি৷ এখানথেকে সূর্যদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যাবে প্রাণ ভরে। ডায়মন্ড হারবারকে যানজট থেকে মুক্তি দিতে অত্যাধুনিক বাস টার্মিনাস তৈরি হবে। আগামী দিনে ডায়মন্ড হারবারকে সুন্দর পর্যটক কেন্দ্র করা হবে। লাঞ্চের অর্ডার দিয়েছিলাম একটা রিসর্টে।
আমাদের লাঞ্চ রেডি ছিল। এবার আমরা রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে আমাদের নির্ধারিত টেবিলে বসলাম। ভারী সুন্দর রিসর্ট, আমার কাছে এইটাই সব থেকে ভালো জায়গা। সুইমিং পুলের ধারে বসে বৃষ্টির ফোঁটা গুলোকে গুনছিলাম কারণ বৃষ্টি তখনও আছড়ে পড়েনি মাটিতে। এদের রান্না বান্না অসাধারণ , ভাত ডাল, বেগুন ভাজা, আর ,চিংড়ি মাছ এসব খেলাম ৫৫০ টাকা করে এক একজন। এখানে থাকার খরচ DAB 2000 টাকা থেকে শুরু।
লনে আড্ডা দিয়ে বিকেলে ৪ টা নাগাদ সাগরিকা হোটেলের উল্টো দিকের গঙ্গার পারে গড়ে ওঠা সেই সুন্দর ঝুপড়ি চায়ের দোকানে বসে দু কাপ করে ব্ল্যাক টি খেলাম , আমার খুব প্রিয় এই দোকান গুলো। পাশেই ইলিশ মাছ নিয়ে লাইন দিয়ে বসে আছে দোকানিরা। ওজন ৫০০ গ্রাম থেকে শুরু করে ১২০০ গ্রাম। দাম ৬০০ টাকা থেকে ১০০০ এর মধ্যে। তবে একদম তাজা ও রং ও রুপোলি। এবার মাছ কিনে মাছ ডিকিতে তুলে কলকাতা মুখী হলাম। বৃষ্টি আবার শুরু হয়েছিল , ঘড়িতে সন্ধ্যে ৭ টা, কখন যেন আমতলার সন্ধ্যার বিরক্তিকর জ্যাম এ আটকে গেলাম , রাত্রি ১০ টায় ডেরায় ফিরলাম।
সব শেষে বলি রাজ্য সরকার যেমন ডায়মন্ড হারবার কে সাজাচ্ছে তেমনি কেন্দ্রীয় সরকার যদি অন্তত সারাদিনে দুটো এক্সপ্রেস ট্রেন আগাম আসন সংরক্ষণ ও শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেন পরিষেবা দিতো তবে এই জায়গাটি আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠতো।
(লেখক পরিচিতি: পেশা ভিন্ন হলেই ভ্রমণের টানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। বছরভর ভ্রমণেই কেটে যায় তাঁর। ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখালেখি প্রায় ১০ বছর।)
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-06-21 18:03:17
Source link
Leave a Reply