একটা সময় ছিল যখন মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দের ছিল মেডিকেল অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ উচ্চশিক্ষা নেওয়ার। পরবর্তীতে অনেকেই ঝুঁকেছে বিবিএ ডিগ্রির দিকে। বর্তমানে বাংলাদেশে চাকরির বাজারে যে কয়টি পেশার অসম্ভব চাহিদা রয়েছে তার মধ্যে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার অন্যতম। চাহিদার তুলনায় এই পেশাতে যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা বাংলাদেশে অনেক কম। বাংলাদেশে টেক্সটাইল শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটে চলেছে। বিশ্বমানের টেক্সটাইল শিল্পের কাতারে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্প ইতিমধ্যেই নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলে এই শিল্পে প্রয়োজন দক্ষ প্রযুক্তিজ্ঞানসমৃদ্ধ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের।
ক্রমবর্ধমান টেক্সটাইল মিল, বায়িং হাউস, বুটিক হাউস, ফ্যাশন হাউস ও গার্মেন্টস শিল্পের দ্রুত বিকাশের কারণে এই শিল্পে চাকরির রয়েছে সবসময়ই অবারিত সুযোগ। টেক্সটাইল বা গার্মেন্টস শিল্পে দক্ষ টেক্সটাইল শিক্ষার্থীদের চাহিদা এতোটাই বেশি যে, অনেক সময়ই ফ্যাশন ডিজাইনিং বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাশ করার পূর্বেই ছাত্র ছাত্রীদের চাকরি হয়ে যায়। বাংলাদেশে অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রে যখন চাকরির পদের বিপরীতে অসংখ্য তরুণ-তরুণী হন্যে হয়ে ছুটে চলেছে তখন টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে একজন টেক্সটাইল শিক্ষাথী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকরির আমন্ত্রণের মধ্য হতে নিজের পছন্দমত প্রতিষ্ঠান নিজেই নির্বাচিত করে থাকে। টেক্সটাইল শিল্পে পদের তুলনায় দক্ষ টেক্সটাইল শিক্ষাথীর অপ্রতুলতার কারণে শিক্ষা জীবনের শেষ বর্ষে অধ্যায়নরতদের চাকরিতে নিয়োগ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকলেও এক্ষেত্রে একজন ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষা জীবনে কোন বিরূপ প্রভাব পড়ে না। কেননা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এই বিষয়ক যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত টেক্সটাইল বিষয়ে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই তারা এই বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রেখে চলে।
শিক্ষার্থীদের কাজের ক্ষেত্র
টেক্সটাইল,গার্মেন্টস,ফ্যাশন ডিজাইনিং বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে রয়েছে চাকরির বড় বাজার। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত দেশী-বিদেশি টেক্সটাইল মিল, বিভিন্ন বায়িং অফিস, বুটিক হাউস, ফ্যাশন হাউস,গার্মেন্টস শিল্পে ও টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের রয়েছে অবারিত সুযোগ। মূলত টেক্সটাইল বিষয়ে শিক্ষার্থীদেরকে যেকোন ছোট-বড় টেক্সটাইল/ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির পণ্য উৎপাদন কার্যক্রমের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত করা হয়। বিভিন্ন কম্পোজিট শিল্প, স্পিনিং, উইভিং সহ গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে তারা কাজ করে থাকেন। সেই সাথে বিভিন্ন ব্যাংক এবং শিল্প ঋণ প্রদানকারী সংস্থাসমূহের শিল্পঋণ বিতরণ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ রয়েছে। ফলে শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরেই তাদের জন্য রয়েছে বিশাল কাজের ক্ষেত্র। যার ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহের নিকট টেক্সটাইল বিষয়ের শিক্ষার্থীদের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।
আয় কাঠামো
বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পে ও টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে হলে একজন প্রার্থীকে টেক্সটাইল/গার্মেন্টস বিষয়ে ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করতে হয়। প্রাথমিক অবস্থায় অধ্যায়নরত একজন ছাত্র-ছাত্রী যে কোন প্রতিষ্ঠানেই ১০ থেকে ২০হাজার টাকা বেতনে নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে সক্ষম হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানে কাজ করার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন এবং শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করার পর পরই এক্ষেত্রে তাদের বেতন কাঠামো ১৫-২৫ হাজার টাকা হয়ে থাকে। তবে এই টেক্সটাইল শিল্পে প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি অভিজ্ঞতার যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। একজন টেক্সটাইল শিক্ষার্থীর বেতন তাদের কর্মের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপর নির্ধারিত হবার মাধ্যমে অতিদ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের উন্নয়নে দেশের দক্ষ টেক্সটাইল শিক্ষার্থীরা প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখে চলেছে। দীর্ঘদিন এই শিল্পে নিজের দক্ষতা, মেধা এবং অভিজ্ঞতার কল্যাণে নিয়োজিত টেক্সটাইল শিক্ষার্থীদের বেতন কাঠামো বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে অসম্ভব ভাল। ফলে এই পেশাতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়ে থাকে অতি দ্রুততার সাথে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
দেশের বেকারত্ব দুরিকরণে কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, আমাদের দেশে কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা কিছুটা থাকলেও গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য তৈরির জন্য প্রয়োজন ডিজাইন, কোয়ালিটি এবং মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষা। আর এ কারণেই ডিজাইন শিক্ষার সম্প্রসারণ একান্ত প্রয়োজন। টেক্সটাইল বিষয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে হলে একজন প্রার্থীকে অবশ্যই টেক্সটাইল টেকনোলজিতে(এ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং ও ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে অনার্স, এমবিএ) ডিগ্রী অর্জন করতে হবে। এছাড়াও ডিপ্লোমা ডিগ্রী সম্পন্নকারী ব্যক্তিরাও এই শিল্পে প্রতিষ্ঠা অর্জন করতে সক্ষম হতে পারে।
কোথায় নিবেন প্রশিক্ষণ
টেক্সটাইল,এ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং ও ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে অনার্স, এমবিএ ডিগ্রী সম্পন্নকারী কে টেক্সটাইল টেকনোলজির আধুনিক সকল প্রযুক্তি সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হয়। তাই মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে চাই-আধুনিক ক্যাম্পাস, দক্ষ ফ্যাকাল্টি এবং বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানের উপযুক্ত ভৌত অবকাঠামো। এই বিবেচনায় অন্যতম আলোচিত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি (এনআইএফটি)। এই প্রতিষ্ঠানটিতে ফুলটাইম শিক্ষকদের সাথে রয়েছেন দেশের খ্যাতিমান কিছু পার্ট টাইম শিক্ষক এবং তত্ত্বাবধানে আছেন একদল বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রফেশনালগণ। এদের ক্লাস রুমও প্রয়োজনীয় উপকরণ আধুনিক এবং সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত। প্রজেক্টর ব্যবহারের সুযোগসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্লাসরুম। এনআইএফটি এর কারিকুলাম পাঠদান পদ্ধতি ও পাঠ্য ইত্যাদি ডিজাইন করার ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশের বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুসরণ করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ার লিমকক উইং ইউনিভার্সিটির আওতাভুক্ত বিদেশে ১৪১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ পাবে। চাকরিজীবীদের জন্য সান্ধ্যকালীন শিফট রয়েছে। প্রয়োজনীয় আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি(এনআইএফটি), ৩৮/৩, বীর উত্তম জিয়াউর রহমান সড়ক, নিউ এয়ারপোর্ট রোড, আমতলী, মহাখালী, ঢাকা। ফোন : ০১৭১৩১১৬৩১৩, ০১৭৩১২২০০৯৯, ৮৮৩১৩০৪।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জানুয়ারী ০২, ২০১০
shazzad shohan
চার বছরের বি.এস.সি.অনার্স কম্পিলিট করতে কয় টাকা লাগে ……plz…..বলেন ….