সৃজনশীলতার কোনো সংজ্ঞা আছে কি? কেউ বলবেন আছে, কেউ বলবেন নেই। বিবেচনার বিষয় কোনটা সত্য। আসলে দু’টো উত্তরের কোনোটিই মিথ্যা নয়। কারণ সৃজনশীলতা আপেক্ষিক। ঠিক আইনস্টাইনের আপেক্ষিতার সূত্রের মতো। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে সৃজনশীলতাকে অবশ্যই একভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে নিজস্ব মেধা-মনন-স্বকীয়তার সংমিশ্রণে কোনো কাজ করাই সৃজনশীলতা। যেকোনো ক্ষেত্রেই এর প্রয়োগ ঘটতে পারে। তবে যখন ‘ক্যারিয়ার’ শব্দের আগে বিশেষণ হিসেবে ‘সৃজনশীল’ শব্দটি প্রয়োগ করা হয় তখন এ নিয়ে খানিকটা আলোচনা করা যায় বৈকি।
একজন মানুষ পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রবেশ করে কর্মজীবনে। এটাই প্রচলিত নিয়ম। হতে পারে তা ব্যবসা কিংবা চাকরি। আবার কেউ পেশাজীবিও বলে।
কিছুদিন আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল বড় হয়ে কি হবে? প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সবাই বলতো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি। কিন্তু আজ এর সাথে যুক্ত হয়েছে আরো নানা পেশা। নির্মাণ, লেখালেখি, সাংবাদিকতা, ফ্যাশন ডিজাইনিং, এয়ারহোস্টেস, আরো কত কি? এসব পেশাতে প্রয়োজন হয় একেবারেই নিজস্ব দক্ষতা-মেধা আর স্বকীয় চিন্তাধারার স্পষ্ট প্রতিফলন। সেই বিচারে এগুলোকে সৃজনশীল পেশা তথা সৃজনশীল ক্যারিয়ার বলা যেতে পারে।
আজকের আধুনিক বাংলাদেশে আমাদের কাজের ব্যাপ্তি যেমন প্রসারিত হয়েছে, ঠিক তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে সৃজনশীল ক্যারিয়ার গঠনের পরিসর। একটু চোখ মেলে তাকালেই পেছনে আছে তারুণ্যের অবদান। উদাহরণস্বরূপ শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট। একটা সময় ছিল যখন ময়লা পাঞ্জাবি পড়া, শান্তি নিকেতনের ব্যাগ ঝোলানো, সাহিত্যপ্রেমী, ভাবাবেগী মানুষেরাই আজিজ মার্কেটে যেত। কিন্তু এখন আধুনিক, অত্যাধুনিক তরুণ-তরুণীরাও এসে ভিড় করে আজিকে। আজিজ মার্কেট এখন কেবল সাহিত্যপাড়া নয় একটা ফ্যাশন পাড়াও বটে। মোট কথা আপামর তরুণদের মিলনস্থল। এর পেছনে অবদান সেইসব তরুণদের যারা আজিজে বইয়ের পাশে ফ্যাশন পণ্যের পসরা সাজানোর স্বপ্ন দেখেছিল। এক পা দু’পা করে আজ সেটা সফল। টি-শার্টের জন্য আজিজ মার্কেটের জুড়ি নেই। অনেক তরুণ এখানে গড়ে তুলেছে ফ্যাশন হাউস। এটা একদিকে যেমন মিলনস্থল, পাশাপাশি সেই তরুণদের জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্র। এটাই কি সৃজনশীল পেশা নয়।
আমাদের তরুণরা সৃজনশীল পেশায় নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে পারে। নাটক লেখা, নির্মাণ করা, গান লেখা, সাংবাদিকতা, ফ্যাশন ডিজাইনিং ইত্যাদি নানা পেশা আজ আমাদের মাঝে বর্তমান। এসব পেশায় ক্যারিয়ার গঠন করে উজ্জ্বল ভবিষ্যত নির্মাণ করার জন্য প্রয়োজন শুধু একটু মেধার ব্যবহার। এই ক্ষেত্রে এতোটাই সুবিস্তৃত হয়, যার যার পছন্দানুযায়ী ক্যারিয়ার নেয়া সম্ভব। তবে সৃজনশীল পেশায় যাওয়ার আগে কিছু বিষয় ভেবে নেয়া উচিত। আপনার যে ক্ষেত্রে আগ্রহ আছে যেমন সে ক্ষেত্রেই পা বাড়াবেন। কারণ মেধা-মননের সুষ্ঠু ব্যবহার নির্ভর করে মনের আগ্রহের ওপর। জোর করে কেউ এখানে টিকে থাকতে পারবে না। পেটের ক্ষুধার সাথে মনের ক্ষুধা মেটানোই সৃজনশীল পেশার মূল বৈশিষ্ট্য। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ধৈর্য। সফলতা একদিনে আসে না, ধরে বেধেও আনা যায় না। এজন্য চাই ধৈর্য, লেগে থাকা। তবেই সফলতা আপনার কাছে এসে আত্মসমর্পন করবে। ইচ্ছা আর পরিশ্রমের সমন্বয় ঘটাতে পারলেই আপনি সফল হবেন। আবারো প্রমাণিত হবে পরিশ্রম সৌভাগ্যের চাবিকাঠি।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জানুয়ারী ০২, ২০১০
Leave a Reply