ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের। সেখানকার আমের বাগানে রয়েছে দুটি দুর্লভ প্রজাতির আমগাছ। এবং এটি বিশ্বের দ্বিতীয় মূল্যবান আম। এক কেজি আমের দাম ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। আর আমের পোশাকি নাম মিয়াজাকি।
মিয়াজাকি নামটা শুনে কেমন জাপানি জাপানি মনে হচ্ছে তো? হওয়ারই কথা। এটি একটি জাপানি আম। জব্বলপুের এক দম্পতি নিজেদের বাগানে এই আমের দুটি গাছ লাগিয়েছিলেন। তারই ফল পাচ্ছেন তাঁরা।
মিয়াজাকি আমের রং টকটকে লাল। একে সূর্যের ডিম নামেও ডাকা হয়। ভোরবেলার টকটকে লাল সূর্যের মতোই দেখতে এই দুর্লভ প্রজাতির আমটি। জব্বলপুরে কৃষক দম্পতি সংকল্প পরিহার এবং রানি পরিহার নিজেদের বাগানে এই আমের চারা রোপন করেন। চারাটি তাঁরা পেয়েছিলেন চেন্নাইয়ের এক ব্যক্তির কাছ থেকে। তখন অবশ্য তাঁরা এই দামের মূল্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। অভ্যাসবশত আর পাঁচটা আম গাছের মতো এটিও রোপণ করে যত্ন আত্তি নিতে শুরু করে দেন তাঁরা। এমনকি তাঁরা নাকি মিয়াজাকি নামটা পর্যন্ত শোনেননি। যত্ন নিতে নিতে গাছ বড় হয়। গাছে ফল ধরে। কিন্তু এ কেমন আম? আর পাঁচটা আমের মতো তো এটি হলদে, কমলা, সবুজ নয়? এ আমের রঙ তো পুরো লাল। তাহলে কি বিষাক্ত কিছু? খোঁজ নিতে শুরু করেন পরিহার দম্পতি।
আসল খবর পেয়ে তো তাঁদের চক্ষু চড়কগাছ। আন্তর্জাতিক বাজারে এই আমের মূল্য নাকি কেজি প্রতি ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। গত বছর অন্তত এই দামেই বিক্রি হয়েছে এই আম।
আর এসব খবর চাউর হতেই শুরু হয় সর্বনাশ। আম চুরি করতে ময়দানে নেমে পড়ে ‘ডাকাতে’র দল। অগত্যা সবে ধন নীলমণি এই লাল আমকে রক্ষা করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই পরিবারও। দুটি আম এবং একটি গাছের ডাল ‘ডাকাতি’ হওয়ার পর গাছের নিরাপত্তা জোরদার করেন তাঁরা। মোতায়েন করা হয় ৬টি শিকারি কুকুর এবং ৪ জন কড়া নিরাপত্তারক্ষী। এঁদের চোখ এড়িয়ে এখন আম গাছের কাছে মশাও গলতে পারে না।
দম্পতি নিজেও সদা জাগ্রত থাকেন। গাছ দুটিকে নিজের সন্তানের মতো দেখভাল করেন পরিহার দম্পতি। করারই কথা এত দামি সন্তান বাড়িতে থাকলে তাঁর যত্ন তো নিতেই হবে। গাছের আসল নাম যে মিয়াজাকি তা যখন তাঁরা জানতেন না তখন সোহাগ করে সেগুলির নাম রেখেছিলেন দামিনী।
দামিনীর খবর এখন সবাই ধীরে ধীরে জানতে পারছেন। ব্যবসায়ীরা পরিহারদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। ফল বা আঁটি, এবং চারা কিনতে চাইছেন মোটা অর্থের বিনিময়ে।
কিন্তু এই মিয়াজাকি বা দামিনী আমের এত দাম কেন? কী আছে এতে? বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে অবশ্য তেমন কোনও সন্তোষজনক উত্তর মেলেনি। আফগানিস্তানের নূরজাহানের পর এই মিয়াজাকি বা দামিনী হল বিশ্বের দ্বিতীয় মূল্যবান আম। স্বাদে অপূর্ব। যদিও এর কোনও বিশেষ গুণ আছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
গাছটি দেখার ইচ্ছে হলে জব্বলপুরের পরিহারদের বাগান থেকে ঘুরে আসতে পারেন। তাঁদের এখন মোটামুটি সকলেই চেনে। এখন আর তাঁরা আম আদমি নন। এখন তাঁরা “খাস আম-আদমি”। মধ্যপ্রদেশ ট্যুরে গিয়ে পরিহারদের বাগান দর্শন হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই ট্যুর প্যাকেজের আওতাভুক্ত হবে।তাই লক-ডাউন-, করোনার ঝামেলা মেটার পর পরই চেষ্টা করুন জব্বলপুরটা একবার ঘুরে আসতে। ভাগ্যক্রমে একটা গাছের ডাল বা আমের আঁটিও যদি হাতে লাগে তাহলে তো আপনি তিন বছরের মধ্যেই লক্ষপতি।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-06-16 19:52:09
Source link
Leave a Reply