FOMO কী?
অক্সফোর্ড ডিকশানারিতে ফিয়ার অফ মিসিং আউট বা FOMO-র অর্থ কোথাও কোনও আকর্ষণীয় ও উত্তেজনাপূর্ণ ইভেন্ট থেকে বাদ পড়ার অ্যাংজাইটি। যেমন- সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও ইভেন্ট সম্পর্কে জানার পর, মনে হতে পারে আপনাকে বাদ দিয়ে কেউ কোনও ইভেন্টে অংশগ্রহণ করছে বা আপনি সেই নির্দিষ্ট ইভেন্টটিতে উপস্থিত না-থাকায় পিছিয়ে পড়েছেন। এই চিন্তাভাবনা থেকে অ্যাংজাইটি শুরু হয়।
FOMO-র কারণ?
সোশ্যাল মিডিয়া বা বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ না-থাকায় এমনটি হতে পারে। এ ছাড়াও বাচ্চারা এ-ও মনে করতে পারে যে, তাদের তুলনায় অন্যেরা ইন্টারেস্টিং কিছু করছে, অন্যের অনেক বন্ধু আছে বা অনেক ভালো জীবন যাপন করছে।
FOMO-র লক্ষণ
১. অনবরত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট চেক করে যাওয়া। ঘুরতে গিয়ে বা কোনও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা সত্ত্বেও সোশ্যাল মিডিয়া চেক করে গেলে বুঝতে হবে আপনার বাচ্চা FOMO-র শিকার হয়েছে।
২. আপনার পোস্টে কে কেমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, তা জানার জন্য বার বার স্ক্রিন রিফ্রেশ করে যাওয়া।
৩. ২৪ ঘণ্টাই বন্ধুদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় উপস্থিত থাকা।
৪. নিজের দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে যাওয়া।
৫. নতুন জিনিস, অভিজ্ঞতা ও উন্নত জীবনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা।
৬. অনেকক্ষণ ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকার পর একাকীত্বে ভোগা, দুঃখী থাকা বা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়া।
৭. নিজের জীবনের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে পড়া।
৮. সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যের দেখাদেখি নিজের ব্যক্তিগত বা আর্থিক জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
৯. বিরক্তি প্রকাশ ও তর্ক করা, ফ্রাস্ট্রেশন, অ্যাংজাইটি, চোখ পাকানো, রাগ করা।
বর্তমানে ৯০ শতাংশ বাচ্চাদের মধ্যে FOMO দেখা যায়। কোনও কারণে বা শাস্তি স্বরূপ অভিভাবকরা যদি ফোন নিয়ে নেয়, তা হলে তারা মনে করতে শুরু করে যে তাদের কমিউনিটি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
কী ভাবে FOMO-র হাত থেকে নিজের সন্তানকে মুক্ত করতে পারবেন—
এই অনুভূতিকে গাম্ভীর্যের সঙ্গে বিবেচনা করুন
প্রথমে আপনাকে মনে করতে হবে যে এটি একটি গভীর বিষয়। নিজের সন্তানের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাংজাইটিকে ছোটখাটো বিষয় ভেবে হেলায় উড়িয়ে দেবেন না। মনে রাখবেন, তাদের কাছে সোশ্যাল মিডিয়া বাস্তব জীবনের সমকক্ষ। কারণ তাদের সোশ্যাল সার্কেল সেখানেই নিহিত। তারা কোন কোন ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, তা তাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করুন।
তাদের সেন্স অফ সেল্ফকে মজবুত করুন
বঞ্চনা ও আত্মমর্যাদা বোধের অভাবের কারণে বাচ্চা, এমনকি বয়স্করাও এই FOMO-র জালে জড়িয়ে পড়ছেন। তাই নিজের সন্তানকে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাংজাইটি থেকে রক্ষা করতে তাদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলার চেষ্টা করুন। এমনকি আত্মমর্যাদা বোধ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও সমর্থন প্রদান করুন। আপনার সন্তান আত্মবিশ্বাসী হলে, নিজের উপস্থিতি বজায় রাখার জন্য সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিটিতে অংশগ্রহণ করার তাগিদ অনুভব করবে না।
অনলাইনের চেয়ে বেশি অফলাইন জীবনে জোর দিন
ব্যক্তিগত জীবনে আনন্দপ্রদ বা উৎসাহিত করার মতো কোনও ঘটনা না-ঘটলে যে কেউই FOMO-র কবলে পড়তে পারে। তাই নিজের সন্তানকে তাদের বাস্তব জীবনের প্রতি উৎসাহিত করে তুলুন। ব্যক্তিগত জীবনে নানান ইভেন্টে অংশগ্রহণরে সুযোগ পেলে তারা অনলাইন জগতের প্রতি বিশেষ টান অনুভব করবে না। এর জন্য তাদের পছন্দের অ্যাক্টিভিটির আয়োজন করুন। যেমন, নাচ, গান, খেলাধুলো, নতুন কোনও শিক্ষা গ্রহণ ইত্যাদির ওপর জোর দিন।
কোনও বাচ্চা যদি নিষ্ক্রিয় ভাবে বসে থাকে, তা হলে FOMO-য় আক্রান্ত হতে পারে। যেমন গরমের ছুটিতে শুধু বাড়িতে বসিয়ে না-রেখে সামার ক্যাম্পে পাঠান বা কোথাও বেড়াতে নিয়ে যান।
ফোনটিকে পড়াশোনার কাজে লাগান
সন্তানের ফোনের ওপর কড়া নজরদারি চালালেও, দিনের বেলায় কোনও না-কোনও সময় তারা লুকিয়ে-চুরিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মগ্ন হয়ে পড়বে এবং ফের FOMO-র জালে জড়াতে শুরু করবে। তাই এই গ্যাজেটটির সাহায্যে যে জ্ঞান অর্জন করা যায় এবং সৃজনশীল কাজে লাগানো যায়, তা তাদের জানান।
নতুন নতুন বিষয় সার্চ করে সে বিষয় পড়তে বলুন। কোনও আর্ট ওয়ার্ক, পেন্টিং সম্পর্কে জানতে বলুন। সেই অনুযায়ী তাদের কিছু বানাতে উৎসাহিত করুন। এমনকি নানান বিষয়ের ওপর অনলাইন কোর্স চলে, সন্তানের ইচ্ছানুযায়ী তেমন কোনও কোর্সে ভরতি করুন।
সোশ্যাল মিডিয়া যে সব ভালো জিনিস দেখায়, তা শেখান তাদের
সোশ্যাল মিডিয়ায় লোকেরা নিজের জীবনের আনন্দের ও ভালো দিকগুলি তুলে ধরে, তা সন্তানকে ক্রমাগত জানিয়ে যেতে হবে। নিজের একটি হাসিখুশি, উন্নত, আধুনিক ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেন সকলে, কিন্তু সব সময় যে এটি সত্যি হবে, তা মনে করার কোনও কারণ নেই।
সন্তানকে মনে করাতে থাকুন, কোনও মানুষের জীবনই পারফেক্ট নয়, তাই নিজের সম্পর্কে হীন মনোভব রাখার কোনও কারণ নেই।
সীমানা নির্ধারণ করুন
আত্মবিশ্বাসী বাচ্চারাও সোশ্যাল মিডিয়ার মায়াজালে জড়িয়ে পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে ফোন ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ করে রাখা উচিত। সোশ্যাল মিডিয়ার সময় নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ রাখুন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটানোর সীমা নির্ধারিত থাকলে বাচ্চারা প্রোডাক্টিভ অ্যাক্টিভিটিতে মনোনিবেশ করতে পারবে।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-06-16 15:57:56
Source link
Leave a Reply