শিক্ষার্থী কিংবা তরুণদের একটি বয়স সিমাকে আমরা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ তথা স্পর্শকাতর সময় হিসেবে গণ্য করে থাকি। বিশেষকরে দশ থেকে ১৮/২০ বছর বয়সসীমার শিক্ষার্থীদের উচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-অভিভাবক উভয়েরই বিশেষ নজরদারির আওতায় রাখা। যদি তারা চরম অবাধ্য হয়, সেক্ষেত্রে অভিভাকদের সাথে বসে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে তরুণ প্রজন্ম পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন পরিস্থিতি ও পরিবেশের কারনেও বিপদগামী হতে পারে। যেমন স্কুল পড়ুয়া একটি ছেলে-মেয়ে তার পারিবারিক কলহ-দ্বন্দ, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষকদের অসহযোগিতামূলক আচরন, বিশেষকরে ভুলবশত কিংবা যে কোন কারণবশতই হোক অতিরিক্ত শাসন ও বিভিন্ন বৈষম্যমূলক আচড়নের ফলে মানসিকভাবে আঘাত প্রাপ্ত হলে শিক্ষাজীবন বা স্বাভাবিক জীবনের প্রতি তার অনিহা বা সে বিষন্নতায়ও আক্রান্ত হতে পারে। আবার বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকেও প্রত্যাশিত সহযোগিতা না পেয়ে বা যে কোন ঘাত-প্রতিঘাতের শিকার হয়েও এসব হতে পারে। ফলে অভিভাবক এবং স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষের উচিত, উল্লেখিত বিষয়ে ছেলে-মেয়েদেরকে নজরদারির আওতায় রাখা এবং সন্দেহজনক মনে হলে তা ভালো করে খতিয়ে দেখে প্রাথমিকভাবে তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া। এতেও কাজ না হলে আরো একটু কঠোর হয়ে অনুশাসনে রাখা। এরপরও কাজ না হলে অবিলম্বে অভিভাবককে ডেকে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। এক্ষেত্রে আমি আমার দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে অভিভাবকদের প্রকট অসহযোগিতা লক্ষ্য করেছি। যা শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন এবং প্রতিষ্ঠানের কৃতীত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্যও বিরাট প্রতিবন্ধকতার দেয়াল তৈরী করে।
একটি শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের সকলকে সমমেধা সম্পন্ন করে গড়ে তোলা সম্ভব না হলেও চেষ্টা করলে মন্দের পরিমান বা ব্যবধান যেমন কমানো সম্ভব, তেমনি প্রায় সকলকেই পর্যাপ্ত গাইড দিয়ে অন্ততঃ কাছাকাছি মেধাবী বা ভালো ফলাফলের অধিকারি করে গড়ে তোলা সম্ভব। শিক্ষার্থীদের সু-শিক্ষা তথা মেধায়-মননে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে তাদের মানসিক ও পারিপার্শিক সকল পরিস্থিতি অবলোকন করে সুনির্দিষ্টভাবে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে শিক্ষকদের সাথে নিয়ে যৌথভাবে অগ্রসর না হলে কেবল অর্থ দিয়ে ছেলে-মেয়েদের সকল সমস্যার সমধান সম্ভব নয়।
আর গুণগত মাসম্পন্ন শিক্ষা বহাল রাখতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও তা সফল ভাবে কার্যকর করতে অভিভাবকদের সহযোগিতা আবশ্যক। যেমন: স্কুল-কলেজের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পরীক্ষার উত্তর পত্রের মূল্যায়ন প্রতিষ্ঠান সংরক্ষন করে এবং নম্বর ফর্দের কপি ছাত্র-ছাত্রী কিংবা তাদের অভিভাবকদের মাধ্যমে বাসায় পাঠানো হয় (যা অভিভাবকের স্বাক্ষরসহ জমা নেওয়া হয়)। আমার জানা মতে এ ব্যবস্থা নেওয়ার পর যারা বরাবরই খারাপ করে সে সব শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ডেকে এ সব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ববান শিক্ষকরা ভাল ফলাফল কিভাবে করা যায় তার জন্য নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ভাল ফলাফলের জন্য নির্বাচনী পরীক্ষার পর এত অল্প সময়ে নিজেকে সে প্রস্তুত করে নিতে পারে না বা সক্ষম হয়ে উঠে না। এজন্য তাকে যদি একটু সময় দেওয়া হয় অর্থাৎ সে যদি এক বছর গ্যাপ দিয়ে পরবর্তী বছরে পরীক্ষা দেয়, তাহলে সে যথাযথভাবে নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারবে এবং নিয়মিত অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে অতীতের দুর্বলতা ও ভুলত্রুটি দূর করে পরবর্তী বছরে পূর্বের চেয়ে অনেক ভাল ফলাফল করে তার প্রতিভার স্ফুরণ ঘটাতে পারে। এতে একটু দেরীতে হলেও যদি ভাল ফলাফল হয় তবে তার সুফল সে বাকী জীবন ভোগ করবে। কথায় আছে ভাল দেরীতে হলেও ভাল।
মোঃ রেজাউল করিম
অধ্যক্ষ নর্দান কলেজ বাংলাদেশ
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জানুয়ারী ০২, ২০১০
Leave a Reply