তরল পদার্থ লালা আমাদের মুখের ভেতরকে রাখে আর্দ্র। লালা থাকাতেই আমরা খাবার হজম করতে পারি, কথা বলতে পারি, মুখের স্বাস্থ্যও থাকে ভালো। লালা হলো পরিষ্কার, প্রোটিনসমৃদ্ধ তরল, মুখের লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় এই রস, রক্তের কিছু প্রাণরাসায়নিক বস্তুও চলে আসে লালারসে।
কোনো কোনো অসুখে, যেমন এইচআইভি সংক্রমণ ও ক্যান্সার রোগে, আরও বেশি প্রোটিন এবং এসব রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত বস্তু রক্ত থেকে চলে আসে লালারসে। এসব যৌগ লালারসে বাড়তে থাকে কালক্রমে, তখন লালারসে এদের উপস্থিতিও পরিমাণ মেপে রোগ নির্ণয় হয় আরও সূক্ষ্ম। রক্ত পরীক্ষার চেয়ে লালারস পরীক্ষা অনেক সুবিধাজনক ও সহজ, সংগ্রহ করা সোজা। সুচ ফুটিয়ে নিতে হয় না, টেস্ট কিটও দামে সস্তা। রোগ নির্ণয়ের জন্য ডাক্তারের চেম্বারে যাওয়া। রক্ত ও মূত্রের নমুনা দেওয়া। রক্ত ও মূত্রের নমুনা পাত্রে ও নলে রেখে, একে লেবেল করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো। ফলাফলের জন্য কয়েক দিন অপেক্ষা করা। অনেক সময় রোগীদের ফলো-আপ ভিজিটের সূচি দেওয়া হয়, পরে আরও বাড়তি ও ব্যয়বহুল টেস্ট করতে হয় সূক্ষ্ম রোগ নির্ণয়ের জন্য।
বেশির ভাগ টেস্ট রোগ নির্ণয় করে, যখন রোগ পূর্ণমাত্রায় প্রকাশিত। রোগের সূচনাকালে বা আগাম যে সূক্ষ্ম রাসায়নিক পরিবর্তন হয়, একে নিরূপণের জন্য সংবেদনশীল টেস্ট আছে কমই। লালারসের উপকরণগুলোর টেস্ট এখনো তেমন নেই। তবে আসছে সত্বরই। আজকাল কি হচ্ছে?
বেশির ভাগ টেস্টের জন্য অবশ্য ডাক্তারের চেম্বার, ল্যাব, এসব স্থানে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েই। তবে ল্যাব টেস্ট ও হোম টেস্ট দুটোরই কিট এখন বাজারে ঢুকেছে। এতে ডায়েবেটিস, গর্ভসঞ্চার, এইচআইভি ও অন্যান্য সংক্রামক রোগ নিরূপণের চটজলদি উত্তর পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। রোগ নির্ণয় দ্রুত ও সহজ হওয়ায় যে সুবিধা, তা হলো আরও তাড়াতাড়ি যোগাযোগ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ, চিকিৎসা আগেভাগে দেওয়া, চিকিৎসা নিতে রোগীর আগ্রহ বাড়া, রোগীর সন্তুষ্টি-এসব ঘটছে। সাশ্রয়ীও হচ্ছে। টেস্ট করতে পয়সা কম লাগছে, ডাক্তারের চেম্বারে কম যেতে হচ্ছে, টেস্ট করানোর জন্য হাসপাতালে যেতে হচ্ছে, জীবনের গুণগত মানও বাড়ছে।
লালারসের রোগনির্ণয়ী টেস্টের মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের হরমোনাল, এইচআইভি ও অ্যালকোহল টেস্ট। প্রতিটি টেস্টের জন্য প্রয়োজন হয় সামান্য পরিমাণ লালারস, পাওয়া যায় দ্রুত ও অত্যন্ত সঠিক ফলাফল। ডিআরএ কুইক টিএম এইচআইভি টেস্ট টেস্ট একটি উদাহরণ।
ভবিষ্যতে রয়েছে নতুন সম্ভাবনা।
বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করেছেন এমন সব জিন ও প্রোটিন, যা লালাগ্রন্থিতে প্রকাশিত। এ নিয়ে আরও ব্যাপক অনুসন্ধান ও ফলাফল লাভের সম্ভাবনা তো রয়েছেই।
এসব গবেষণার ওপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয়ের জন্য দেহতরলের নমুনা হিসাবে লালারস গুরুত্বপূর্ণ হবে। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, পেরি ও ডনট্যাল রোগ এবং অন্য আরও রোগ নির্ণয়ের জন্য লালারস প্রাধান্য পাবে।
লালারস সম্পর্কিত রোগনিরূপণী পরীক্ষাগুলো করে ফলাফল পাওয়া যাবে দ্রুত। এমন হতে পারে যে একজন ডেনটিস্ট বা ফিজিশিয়ান রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে সংগ্রহ করবেন লালারসের একটি স্বল্প পরিমাণ নমুনা, পুরো, স্বয়ংক্রিয় টেস্টে লোড করবেন, সংগ্রহ করবেন ফলাফলের প্রিন্ট রিড আউট।
সূত্রঃ প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৩, ২০০৮
Leave a Reply