শান্তি, শৃঙ্খলা, প্রগতি—এই তিন হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের মূলনীতি। বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা বিধান ও সেবার মহান ব্রত নিয়ে কাজ করে পুলিশ বাহিনী। সমগ্র পুলিশ বিভাগের এ বড় দায়িত্ব মাঠ পর্যায়ে পালন করে থাকেন একজন কনস্টেবল। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা ও জননিরাপত্তা বিধানে তাঁদের ভূমিকাই প্রধান। সুযোগ এসেছে পুলিশ কনস্টেবলের চাকরিতে ঢোকার।বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত আছেন প্রায় এক লাখ কনস্টেবল। বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (প্রশিক্ষণ) মো. মতিউর রহমান জানান, পুলিশ সদস্যের অপ্রতুলতা বিবেচনায় নিয়ে সারা দেশের ৬৪ জেলায় একযোগে এক হাজার ৫০০ জন কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে ৩০০ জন নারীকেও নিয়োগ দেওয়া হবে।এ ছাড়া বিভিন্ন পদে সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর জন্য সম্ভাব্য নিয়োগ প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলছে। সব মিলে পুলিশ বাহিনীতে পেশা গড়ার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
আবেদনের যোগ্যতা
এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যসংবলিত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক, যাঁরা এসএসসি অথবা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং বয়স ১৮ থেকে ২০ বছর এবং উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি (পুরুষ), পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চিসহ (নারী) অন্যান্য শারীরিক যোগ্যতাসম্পন্ন—তাঁরা আবেদনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা পোষ্যদের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ভিন্নতর।
নিয়োগ-প্রক্রিয়া
পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ-প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা পুলিশ সুপার। প্রতিটি জেলায় পুলিশ সুপারদের তত্ত্বাবধানে নির্ধারিত তারিখে শারীরিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের একই দিনে দেড় ঘণ্টার ৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এ পরীক্ষায় যাঁরা কৃতকার্য হবেন, তাঁদের আবার ১০ নম্বরের মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় যাঁরা ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর পাবেন, তাঁরা প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ বলে বিবেচিত হবেন।
লিখিত পরীক্ষা
দেড় ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা পুলিশ সদর দপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত পাঠ্যক্রম অনুযায়ী হয়ে থাকে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। প্রশ্নপত্র তৈরি করবেন পুলিশ সুপাররা। লিখিত পরীক্ষায় সাধারণত এসএসসি বা সমমান পর্যায়ের বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, সাধারণ জ্ঞানসহ সম্পৃক্ত অন্য বিষয় থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে বলে জানান পুলিশের এক কনস্টেবল।
মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা
এ পরীক্ষার পূর্ণমান ১০। মৌখিক পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞানসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। এ পরীক্ষায় মূলত প্রার্থীর নিজেকে উপস্থাপনা করার যোগ্যতা এবং মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি গুরুত্বসহ দেখা হয়। তাই এ পরীক্ষার জন্য ভালোভাবে মানসিক প্রস্তুতি না থাকলে প্রতিযোগিতা থেকে আপনি বাদ পড়তে পারেন।
প্রশিক্ষণ: প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত পুনরায় বাছাই কমিটি কর্তৃক শারীরিক যোগ্যতাসহ অন্যান্য তথ্য যাচাইয়ের পর প্রশিক্ষণের জন্য ডাকা হবে।তাঁরা ‘ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল’ হিসেবে ছয় মাস মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণে অংশ নেবেন। প্রশিক্ষণকালে তাঁরা পোশাক, থাকা-খাওয়া ও চিকিত্সাসুবিধা পাবেন।
বেতন ও পদোন্নতি
সাফল্যের সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ অনুযায়ী একজন কনস্টেবল সর্বসাকল্যে প্রায় নয় হাজার টাকা পাবেন। এ ছাড়া রয়েছে চিকিত্সা ও রেশনসুবিধা।
মো. মতিউর রহমান জানান, একজন কনস্টেবল তাঁর মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্ধারিত পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী উপপরিদর্শক, উপপরিদর্শক হয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হতে পারেন। তিনি আরও জানান, কনস্টেবলরা পদায়ন পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার পর্যন্ত হওয়ার নজিরও আছে।
সাইদ আরমান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ২৬, ২০০৯
হানিফ
নিয়োগ কখন