ক্রোধ মানুষের দ্বিতীয় রিপু। ক্রোধের কি অনল আছে? মানুষের চরম শত্রু ক্রোধ সুন্দরকে মুহূর্তের মধ্যে কুৎসিত করে তুলতে পারে। ক্রোধের জন্য কেউ আপনাকে শাস্তি না দিক, ক্রোধ আপনাকে ঠিকই শাস্তি দেবে। অতএব, রাগবেন না। রাগলেন তো হেরে গেলেন। হেরে গেলেন, যার সঙ্গে রাগ করলেন তার কাছে। হেরে গেলেন আপনার নিজের কাছে, আপনার শরীরের কাছে।
আমেরিকার বিখ্যাত জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কোনো ব্যাপারে রাগের সঙ্গে আচরণ করে, ৫৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি স্বাভাবিক আচরণকারীদের তুলনায় তিন গুণ বেশি। রাগান্বিত হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যেই হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা দুই গুণ বেশি।
রাগের কারণে শরীরে কী ঘটে
–আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ক্রোধের সময় অ্যাড্রেনালিন ও নরঅ্যাড্রেনালিন হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই হরমোন দুটি রক্তনালিকে সংকুচিত করে এবং হৃৎস্পন্দন বাড়ায়। ফলে রক্তচাপও বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিক সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃৎস্পন্দনের হার প্রতি মিনিটে ৭০ থেকে ৮০। রাগের সময় তা বেড়ে প্রতি মিনিটে ১৮০ বা আরও বেশি হতে পারে। স্বাভাবিক সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রক্তচাপ ১২০/৮০ মিলিমিটার পারদ। আর রাগের সময় তা বেড়ে হতে পারে ২২০/১৩০ মিলিলিটার পারদ। এসব কারণে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। মস্তিষ্কের অত্যন্ত সরু রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে হতে পারে স্ট্রোক।
–রাগের সময় শরীরের রক্তকণিকা ও অণুচক্রিকার মাধ্যমে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বেড়ে যায়। রক্ত জমাট বেঁধেও যায়। এই জমাট বাঁধা রক্ত হৃৎপিণ্ডের ধমনিতে প্রবেশ করলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে আর মস্তিষ্কের সরু রক্তনালিতে গেলে হতে পারে ব্রেইন স্ট্রোক।
–রাগের সময় শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যায়। হার্টে অক্সিজেনের ঘাটতির জন্য বুকে ব্যথা হয় (এনজাইনা)। আর বাড়তি অক্সিজেনের চাহিদা পূরণের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিও বেড়ে যায়।
–ক্রোধের কারণে রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যায়।
–ক্রোধের সময় মাংসপেশিতে কাঁপুনি হয়। শরীর তখন কাঁপতে থাকে, যা রাগের কাঁপুনি।
–রাগের জন্য ঘাড় ও মাথার পেশির খিঁচুনি হয়। ফলে মাথাব্যথা অনুভূত হয় এবং ঘুম চলে যায়।
–পাকস্থলীতে বেশি এসিড নিঃসরণ হয়। ফলে পেপটিক আলসার হতে পারে।
–শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ক্রনিক রাগী ব্যক্তিরা ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা, হাঁপানি ইত্যাদি রোগে ভুগতে পারে।
–রাগী ব্যক্তিরা অসুখীই থাকে। একটু সুখের আশায় বিকল্প হিসেবে ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদির আশ্রয় নেয়। পরিণতিতে শরীরের আরও ক্ষতি হয়।
অতএব সুস্থতার জন্য আমাদের রাগ নিয়ে চিন্তা করতে হবে, রাগকে বাগে আনতে হবে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, অনেক উপায়ের মধ্যে নিচের কয়েকটি উপায়ে ক্রোধ প্রতিরোধ করা যেতে পারে-
–প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মিনিট একাকী বসে ধ্যান করুন। সৎ চিন্তা করুন।
–রেগে গিয়ে কোনো বিষয়ে উত্তর দেওয়ার আগে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গণনা করুন।
–নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
–রাগ দমনে ব্যর্থ হলে একজন মনোরোগ চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করুন।
ডা· মো· শহীদুল্লাহ
সহযোগী অধ্যাপক, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ, কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ
সূত্রঃ প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৩, ২০০৮
Leave a Reply