নানাভাবে আমরা সবাই মাথাব্যথার রোগী। কেউ ক্ষণস্থায়ীভাবে ভোগে, আবার কেউ বা নিয়মিত কষ্ট পায়। বিভিন্নভাবে মাথাব্যথা হতে পারে।
কী কারণে মাথাব্যথা হচ্ছে সেটা উদ্ঘাটনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেদনাসিক্ত ব্যাপার হচ্ছে মাইগ্রেন।
মাইগ্রেন সাধারণত তিন প্রকার। কমন মাইগ্রেন, ক্লাসিক মাইগ্রেন ও কমপ্লিকেটেড মাইগ্রেন। কমন মাইগ্রেন হলো, হঠাৎই যন্ত্রণা শুরু হয়, কয়েক ঘণ্টা পর আবার নিজ থেকেই কমে যায়। ক্লাসিক মাইগ্রেন যন্ত্রণা শুরু হওয়ার আগে বিভিন্ন ধরনের পূর্বাভাস থাকে। যন্ত্রণা এক থেকে তিন দিন স্থায়ী হয়। আর কমপ্লিকেটেড মাইগ্রেন বেশ কয়েক দিন অবস্থান এবং দেহের কোনো না কোনো অঙ্গ অবশ করে রাখতে পারে।
তাই খুব স্বাভাবিকভাবে রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ওষুধ নির্বাচন করতে হয়। সাধারণ মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে শুধু ব্যথা কমানোর ওষুধ খেলেই চলে। যেমন- প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন, ডাইক্লোফেনিক সোডিয়াম ইত্যাদি ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
সাধারণত এসব ওষুধ খেলে ব্যথার তীব্রতা কমে যায়। মনে রাখতে হবে, এসব ওষুধের বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে এবং যে কারণে এ-জাতীয় ওষুধ বেশি দিন খাওয়া যাবে না এবং খালিপেটে তো একদম খাওয়া ঠিক নয়। ব্যবহারের মুনশিয়ানার ওপর ওষুধের কার্যকারিতা নির্ভর করে। বমি ভাব, ক্লান্তি, খিদে কমে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। মনে রাখতে হবে, ওষুধের পাশাপাশি লাইফ স্টাইলের পরিবর্তন, ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি এগুলোও দরকার। অন্যান্য রোগের সঙ্গে মাইগ্রেন বা মাথাব্যথার সম্পর্ক আছে।
যেমন-অ্যানিমিক রোগীরা মাইগ্রেনের শিকার হয়। অনেকের পরিবেশের কারণে মাথাব্যথা হয়। অতিরিক্ত তাপ, ঠান্ডা, রোদ, শব্দ, মেঘলা বা বৃষ্টিতে ভেজার কারণে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো ওষুধের কার্যকারিতা খুব কম। পরিবেশগত উন্নতি করা সম্ভব হলে মাথাব্যথা থাকবে না। ট্রেন, বাস বা ট্যাক্সিতে চড়লে অনেকেরই মাথার যন্ত্রণা শুরু হয়। আবার দেখা যায় সেসব ব্যক্তির ক্ষেত্রে ট্রেনে চড়লে মাথাব্যথা কম হয় বা একদমই হয় না। অতএব এ রকম ক্ষেত্রে ওষুধ খেলে কোনো ফল হয় না। সবচেয়ে বড় কথা, অনেকেই বিনা কারণে ওষুধ খায়। তাদের মাথাব্যথা রোগ হবেই। কেননা প্রায় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ‘মাথাব্যথা’ অতি সাধারণ উপসর্গের একটি।
সুভাষ সিংহ রায়
ফার্মাসিস্ট
সূত্রঃ প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৩, ২০০৮
Leave a Reply